ছাত্রলীগের কাছে প্রশাসন কি এতই ক্ষমতাহীন

সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক সভা ও কর্মী সম্মেলন নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দল ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকেই এমন কর্মসূচি পালন করতে দেখি আমরা। রাজধানীতে এমন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকায় খোদ শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

এরপরও এমন কর্মকাণ্ড থেমে থাকছে না; বরং বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যা ঘটেছে, তা গুরুতর তো অবশ্যই, আইনবিরোধীও। সেখানে গত বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্রলীগের কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছে। ছাত্রলীগকে বাধা দেওয়ার কোনো তৎপরতা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যে দেখা যায়নি। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এ ঘটনার চরম নিন্দা জানাই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জীববিজ্ঞান ও অর্থনীতির পরীক্ষা শুরু হয়। কক্ষের ভেতরে যখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন চলছিল মঞ্চ ও প্যান্ডেলের সাজসজ্জার কাজ। অথচ পরীক্ষা চলাকালে সে সময় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। ফলে বাইরের কারও সেখানে ঢোকার সুযোগ নেই।

কিন্তু সেই আইন ভেঙে বিদ্যালয়ের মাঠে চলছিল কর্মিসভার আয়োজন। সে সময় কেন্দ্রের মূল ফটকে কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য থাকলেও তিনি ছিলেন নির্বিকার। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন কর্মসূচির আয়োজন করায় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ছিলেন অসহায়।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহান সাগরের বক্তব্য, ছাত্রলীগের কেউ বেলা তিনটার আগে বিদ্যালয় এলাকায় যাননি। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে পরীক্ষা চলাকালে কর্মিসভার সব আয়োজন করা হয় এবং সেটি আইন ভঙ্গ করেই। বিকেলে শুরু হওয়া সেই কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক।

ওই কেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রাজ্জাক উল হায়দার বলেন, ‘কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাঠে সাজসজ্জার কাজ করার বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি।’

আমরা তাঁর এ বক্তব্যে অবাক হই, মাঠজুড়ে যেখানে বড় একটি কর্মিসভার আয়োজন চলছে, সেটি তাঁর চোখেই পড়েনি। তাঁর এমন বক্তব্য সত্যিই হতাশাজনক। এভাবে আইন ভঙ্গ করে ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পাবলিক পরীক্ষা কীভাবে চলে? এখানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ছাত্রলীগের ওই বেপরোয়া ক্ষমতাচর্চার কাছে তারা কি এতটাই ক্ষমতাহীন?