দুদকের নখ, দাঁত আর কবে গজাবে

সম্পাদকীয়

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা পৃথক তিন মামলায় এক আসামির জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ যে রায় দিয়েছেন, তা দুদকের প্রতি কড়া বার্তাই বটে।

অন্য ক্ষেত্রে আদালত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। এখানে তিন মাসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ না করতে পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আদালতে হলফনামাও দিতে বলেছেন আদালত। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা পৃথক মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।

এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। আদালত বলেন, ‘আইনানুযায়ী, ১২০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দুদক এই সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সময়মতো তদন্ত শেষ না হলে মামলার অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষ করতে না পারলে তাদের পদপদবি থেকে পদত্যাগের নজির অনেকে দেশে আছে। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের নজির নেই। বরং যেসব কর্মকর্তা সফলভাবে তদন্ত করেন, তঁাদের হয়রানি-চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে।’

আরেকটি বিষয় হলো ঋণখেলাপিদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণখেলাপিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে, বিদেশভ্রমণের জন্য তাঁরা বিমানের টিকিটও পান না। কিন্তু আমাদের দেশে ঋণখেলাপিরা সর্বত্র দাপট দেখিয়ে বেড়ান, এক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ থাকা সত্ত্বেও অন্য ব্যাংক থেকে তাঁদের ঋণ নিতে কোনো অসুবিধা হয় না। যে সমাজে ঋণখেলাপিদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়, সেই সমাজে খেলাপি ঋণ কমার কোনো কারণ নেই। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে নানা আওয়াজ তুললেও বাস্তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। দুদকের বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ হলো সরকার যে মামলাগুলো সচল রাখতে আগ্রহী, তারা কেবল সেগুলোর তদন্ত করে, বাকিগুলো হিমাগারে চলে যায়।

উল্লেখ্য, বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা করে দুদক, যেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে, যাঁর বিপরীতে ৪২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ আছে। আদালত যথার্থই বলেছেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? দুদকের সাবেক একজন চেয়ারম্যানের ভাষায় প্রতিষ্ঠানটি নখ–দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে, যে কারণে দুর্নীতিবাজেরা সহজে পার পেয়ে যান।

আদালত দুদকের প্রতি যে কড়া বার্তা দিয়েছেন, তা কতটা কাজে লাগবে বলা কঠিন। এ রকম সতর্কবার্তা আগেও অনেকবার দেওয়া হয়েছিল। দুদক আমলে নেয়নি। তারপরও আমরা আশা রাখতে চাই আদালত অবমাননা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য হলেও দুদক সক্রিয় হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে অপরাধীদের বিচারের পথ উন্মুক্ত করবে।