ফুটবলের গ্রামটিতে মাঠের ব্যবস্থা হোক

সম্পাদকীয়

ফুটবলে একের পর এক বড় সাফল্য এনে দিচ্ছে আমাদের মেয়েরা। এই মেয়েরা উঠে এসেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। তাদের অনুপ্রেরণায় আরও অনেক মেয়ের ঝোঁক বাড়ছে ফুটবলের প্রতি। যেমন মাগুরা শহরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মেয়েদের মধ্যে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন প্রবল। সেখানকার অনেক মেয়েই এখন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। দুঃখজনক হচ্ছে, সেখানে মেয়েদের জন্য কোনো খেলার মাঠ নেই।

উপজেলার গোয়ালদহ ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ সত্যিই আশাজাগানিয়া। ২০১৮ সাল থেকে সেখানকার গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২১ জন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছে। গত মার্চে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাসও উঠে এসেছেন গোয়ালদহ থেকে। এই মেয়েরা মূলত অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তারা মূলত ফুটবল খেলে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করারই স্বপ্ন দেখে। বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারলে ফুটবল খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াটাও চালিয়ে নিতে সহজ হয় তাদের। আর আছে ফুটবল খেলে পরিবারের হাল ধরা। সব মিলিয়ে পরিবার থেকেও তারা ফুটবল খেলার জন্য উৎসাহ–উদ্দীপনা পায়।

বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের খেলোয়াড় মুন্নি (১৭) প্রথম আলোকে বলে, ‘শুরুতে অনেকেই আজেবাজে কথা বলত। এখন সবাই বাহবা দেয়। আমার সঙ্গে পড়ত, এমন অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ফুটবল আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমরা যারা ফুটবল খেলেছি, তারা সবাই বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বা ভালো চাকরির পাওয়ার আশা করি। কারণ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের এসব জায়গায় ভালো সুযোগ রয়েছে।’

গোয়ালদহের মেয়েরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে মাগুরাকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা রেখেছে। গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষের বড় একটি আলমারি ভরে গেছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে জয় করা ট্রফিতে। এই স্কুলের ২০ শতাংশের ছোট একটা মাঠে সকাল-বিকেল নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে ফুটবলের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় মেয়েদের। এখন দিন দিন গোয়ালদহ ও আশপাশের গ্রামের মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ছে। কিন্তু সেই অর্থে অনুশীলনের জন্য বড় কোনো মাঠ নেই।

মেয়েদের ফুটবল খেলার জন্য বড় মাঠের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। এ বিষয়ে মাগুরার জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোয়ালদহ এলাকায় মেয়েদের জন্য খাসজমিতে একটি বড় খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে স্থানীয় কিছু লোক ওই জমি নিয়ে মামলা করেন। আমরা মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

আমরা আশা করব, দ্রুতই একটি মাঠের ব্যবস্থা হবে। মেয়েদের ফুটবলের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন সর্বদা মনোযোগী থাকবে।