অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের দায় কার

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকার আমিনবাজারে কিচেন মার্কেটের দোকানগুলো ভেঙে আবার নতুন করে বানাতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এটি একই সঙ্গে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের একটি উদাহরণ।

গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সময় ২০০৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস করে।

কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারের যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, আমিনবাজার ও মহাখালী এলাকায় তিনটি কাঁচাবাজার করা হয়েছিল। সর্বশেষ তিন দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুনে এর কাজ শেষ হয়।

প্রকল্পটির আওতায় যাত্রাবাড়ীতে একটি ব্লকের ছাদের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে মহাখালীতে নির্মিত কাঁচাবাজারের ভবনটি করোনা হাসপাতালে পরিণত করা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজার স্থানান্তরের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নড়েচড়ে বসে।

আমিনবাজারে পরিদর্শনে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, অতীতে ব্যবসায়ীদের মতামত না নিয়ে এবং যথাযথ পরিকল্পনা না করে কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ করা হয়েছিল। ডিএনসিসির কর্মকর্তারাও বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছেন এবং ভবনটিতে সবজি রাখা যাবে না বলে জানিয়েছেন।

কারওয়ান বাজার রাজধানী ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যিক এলাকা। এখান থেকে পাইকারি কাঁচাবাজার সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ রকম অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এটা সত্যিই বিস্ময়কর যে একটি পাইকারি কাঁচাবাজার কেমন হতে পারে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই কীভাবে একটি মার্কেট বানিয়ে ফেলা হলো! যাদের সরিয়ে নেওয়া হবে, সেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মতামত না নেওয়ার যে বিষয়টি মেয়র উল্লেখ করেছেন, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে এ প্রকল্প যারা বাস্তবায়ন করেছে, তারা কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কাজটি করেছে।

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকারের তরফ থেকে নানা রকম কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ রকম অবস্থায় যদি অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়, তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

এ ধরনের অপরিকল্পিত কাজ রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। এসব কাজের সঙ্গে যঁারা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং তঁাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।