দেশের নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। বিষয়টিকে আমরা দেখি শুধু খাদ্যের অভাব দূর করা ও খাদ্যনিশ্চয়তা পূরণ করার অর্থে। এখানে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটা গৌণ হয়ে থাকে। কারণ, জাতিগতভাবে আমরা এখনো ভাবতে পারি না, যে খাবারটি খাচ্ছি তা কতটা নিরাপদ। সরকারি নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপগুলোও আমাদের সেই উপলব্ধি তৈরি করে না। ফলে শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে বিষপ্রয়োগের বিষয়টি আমাদের একপ্রকার মেনেই নিতে হয়, যা একই সঙ্গে দুঃখ ও হতাশাজনক।
দেশে উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভারী ধাতু ও কীটনাশকের উপস্থিতির ঘটনা নতুন নয়। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় এটি বারবার উঠে আসে। সম্প্রতি ফলমূল ও শাকসবজি নিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় করা পৃথক দুটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও একই ঘটনা দেখা গেছে।
গবেষণা দুটির ফলাফল বলছে, শাকসবজিতে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ কয়েকটি ভারী ধাতুর উচ্চ উপস্থিতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে লালশাকে। ফলের মধ্যে লিচুতে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক। আর জেলাভিত্তিক হিসেবে নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতুযুক্ত শাকসবজি। শেরপুরে শাকসবজিতে আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুও পাওয়া গেছে। ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া থেকে সংগ্রহ করা কয়েকটি ফলের প্রতিটির ৮০টি করে মোট ৩২০টি নমুনার ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। আরেকটি গবেষণা করা হয় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে ৯ ধরনের শাকসবজি নিয়ে। শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল ও লালশাকে ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, টমেটো ও লালশাকে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, যেসব শাকসবজিতে ভারী ধাতু রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ সমস্যা উত্তরণের জন্য শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনপ্রক্রিয়াকে নিয়মিত তদারক করা, উত্তম কৃষিচর্চার ওপর জোর দেওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষক দল।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আমরা সাধুবাদ জানাই এমন জনগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালানোর জন্য। তাদের পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে কৃষি উৎপাদন–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে। কীটনাশক ব্যবহারে অনিয়ম ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে। যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকভাবেই এগিয়ে আসতে হবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। নয়তো আমাদের সবাইকে এর ভুক্তভোগী হতে হবে। বিশেষ করে নতুন ও পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থতার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।