মুক্ত ও স্বাধীন—এসব ধারণা পাওয়া যায় পাখিদের কাছ থেকেই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যে ভয়াবহভাবে পাখি হত্যার একের পর এক খবর পাচ্ছি, তাতে আমাদের শঙ্কিত হতেই হয়। ভাবি, এ দেশ পাখিশূন্য হতে, গাছশূন্য হতে কত দূর! এমন দুশ্চিন্তায় কিছুটা হলেও আমাদের আশান্বিত করে পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ। তাঁরা শিকারিদের থেকে পাখিদের মুক্ত করেন, পাখিদের জন্য করেন নিরাপদ আবাসস্থল, পাখিদের নিয়মিত খাওয়ান।
যশোরের কেশবপুর শহরের বাসিন্দা সংদীপ্ত সাহা (৫২) এমনই একজন পাখিপ্রেমী মানুষ। শহরের কালাবাসা মোড়ে এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোরে পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন তিনি। পাখিদের অভ্যাস হয়ে গেছে সংদীপ্তর এই আতিথেয়তায়। ভোর হলেই খাবার খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে নানা জাতের পাখি।
সংদীপ্ত সাহা একজন ছোট দোকানদার। নানা পদের খাবার, বিশেষ করে ভাজাপোড়া বিক্রি করেন তিনি। তবে পাখিদের খাওয়ান তিনি পাউরুটি, বিস্কুট ও পেঁয়াজু ভাজার গুঁড়া। দোকান খুলেই তিনি প্রথম যে কাজ করেন, তা হলো পাখিকে খাবার দেন। সংদীপ্ত বলেন, যতক্ষণ না তিনি খাবার দেন, ততক্ষণ পাখিগুলো দোকানের পেছনের শজনেগাছের ডালে অপেক্ষা করতে থাকে। টিনের চালে খাবার দেওয়ামাত্রই কিচিরমিচির করে খাবার খেতে থাকে পাখির ঝাঁক। কোনো দিন সেই ঝাঁকে থাকে ৫০টির মতো, কখনো ১০০টির মতো পাখি। শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, দোয়েল, কবুতরই বেশি আসে।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার সংদীপ্তর। দোকানের আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে যায় তাঁর। পাখিগুলোর খাবারের পেছনে তাঁর প্রতিদিন ১০০ টাকার মতো যায়। করোনার সময় যখন সংদীপ্তর দোকান বন্ধ ছিল, তখনো তিনি নিয়ম করে পাখিগুলোকে খাবার দিয়েছেন। তিনি জানালেন, পাখিগুলোকে খাবার খাইয়ে তাঁর আনন্দ হয়। তিনি কোনো দিন দোকানে আসতে না পারলে তাঁর দুই ছেলে সজল সাহা ও ইমন সাহা পাখিগুলোকে খাবার দেন।
অনেকটা নীরবেই পাখিদের এভাবে যত্নআত্তি করে যাচ্ছেন সংদীপ্ত। প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের যে দায়িত্ব, মূলত সেটিই পালন করে যাচ্ছেন তিনি। তা ছাড়া পরিবেশ-প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতি ভালোবাসা আমাদের আরও বেশি মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেয়। সংদীপ্ত সাহাকে অভিবাদন। তাঁর অনুপ্রেরণায় আরও মানুষ এভাবে এগিয়ে আসুক পাখিদের সুরক্ষায়।