পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হয়েছে, গড়ে উঠেছে বড় বড় পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় এখনো পিছিয়ে আছে সেখানকার বাসিন্দারা। প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, নিয়মিত–অনিয়মিতভাবে বেসরকারি অনুদান বা সাহায্য–সহায়তায় যেগুলো কোনোভাবে পরিচালনা হয়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় এবারের বন্যায় তেমন একটি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধসে গেছে। গাছের ছায়ায় শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে পাঠদান চলছে। প্রাইমারি স্কুলটি আবার নতুন করে দাঁড় করাতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্ত হয় খাগড়াছড়ি জেলাও। সেখানকার অনেক ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে দীঘিনালা সদর উপজেলার ছকাবাছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধসে গেছে। উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মেরুং বাজার। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৪০ মিনিট সময় লাগে ওই এলাকায় পৌঁছাতে।
এ থেকেই বোঝা যায় কতটা প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুলটির অবস্থান। ছকাবাছড়া থেকে সবচেয়ে কাছের বিদ্যালয়টিতে যেতে বেশ কয়েকটি পাহাড় আর দুটি ছড়া ও মাইনী নদী পার হতে হয়। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহরে গিয়ে পড়ালেখা করে। তবে গ্রামের অধিকাংশ ছেলেমেয়ের পক্ষে অত দূরে গিয়ে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য এ বেসরকারি বিদ্যালয়টি বড় ভরসাস্থল।
পাড়ার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বিধ্বস্ত বিদ্যালয়টি ছাড়া আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১। তার মধ্যে ২৬ ছাত্রী আর ২৫ জন ছাত্র। তাদের সবারই লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বেঞ্চ, চেয়ারসহ বিদ্যালয়ের সবকিছু। বিদ্যালয়ের চারপাশ দেখলে বোঝার উপায় নেই এখানে বিদ্যালয় ছিল। বিদ্যালয়ের চারপাশে যত দূর চোখ যায় শুধু বালুচর। শিক্ষকেরা গাছের নিচে কিংবা কারও বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেটের মতো করে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। কিন্তু এভাবে কত দিন? বিদ্যালয়টি নতুনভাবে নির্মাণ করাটা খুবই জরুরি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নিজেদের বাড়ি মেরামত করবে নাকি স্কুল নতুন করে তৈরি করবে, এ নিয়ে শঙ্কায় এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, কেউ যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন, প্রয়োজনে তাঁরা শ্রম দেবেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদকে ধন্যবাদ জানাতে হয়, তিনি দুর্গম এলাকাটিতে গিয়ে বিদ্যালয়টির পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। তিনি বলেছেন, বিদ্যালয়টি নতুনভাবে তুলতে গ্রামবাসী উদ্যোগ নিলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
তবে শুধু ঢেউটিন নয়, চেয়ার–টেবিলের জন্যও আর্থিক সহায়তা দরকার। স্থানীয় প্রশাসনসহ বেসরকারি কোনো সংস্থা বা জেলা–উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ এখানে ভূমিকা রাখতে পারে। সবার সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি আবারও পুরোদমে চালু হোক, সেটিই আমরা প্রত্যাশা করছি।