দেশের রেল যোগাযোগ নিয়ে নানা সমস্যা ও সমালোচনা থাকলেও মানুষের কাছে ট্রেনে চলাচল এখনো অধিক নিরাপদ। এ ছাড়া দেশের অনেক এলাকা আছে, যেখানে ট্রেনে যাতায়াতের ওপর বেশি নির্ভরশীল মানুষ। কিন্তু ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়ার বিষয়টি তো গুরুতর। আর ছিনতাইয়ের ঘটনা তো আছেই। তবে ময়মনসিংহের একটি রুটে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনাগামী জারিয়া ট্রেনে বারবার ডাকাতেরা হানা দিচ্ছে। ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকায় বারবার ডাকাতের কবলে পড়ছে ট্রেনটি। গত বুধবার ভোরেও ডাকাতি হয়েছে ট্রেনটিতে। ডাকাত দলের সদস্যরা মুখে কাপড় বেঁধে ট্রেনে উঠে দেশি অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে চলে যায়। ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যাত্রীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ঝাঞ্জাইল স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন নিয়মিত দিনে চারবার চলাচল করে। ট্রেনটি জারিয়া ট্রেন হিসেবেই পরিচিত। বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি জারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু স্টেশনের অদূরে ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকায় পৌঁছালে ডাকাতের কবলে পড়ে ট্রেনটি। ডাকাত দলের সদস্যরা মুখে কাপড় বেঁধে ট্রেনে উঠে দেশি অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যাত্রী আহত হন। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে।
ওই এলাকায় ট্রেন চলাচল ধীরগতির হওয়ার কারণে ডাকাতেরা এ সুযোগ নিয়ে থাকে। তারা তখন লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ে ডাকাতি করে আবার লাফ দিয়ে নেমে যায়। ময়মনসিংহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ভাষ্য, ওই এলাকায় বাঁকানো ও পুরোনো লাইন হওয়ার কারণে অনেক দিন ধরে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে ১৬ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে তিনি পুলিশের দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার বিষয়টিও সামনে আনেন। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডাকাতেরা এ সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ট্রেনের গতি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তারা কার্যক্রম চালাতে পারে না। এ জন্য জেলা পুলিশকে তৎপরতা বাড়াতে হবে।
ট্রেন যাতায়াতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই ট্রেনে একই জায়গায় বারবার ডাকাতি হবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা আশা করব, ওই এলাকায় ট্রেনের গতি বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এ ছাড়া ডাকাতি রোধে এবং ডাকাতদের ধরতে রেলওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও তৎপর হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সচেষ্ট থাকবে, এটিই কাম্য।