জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করছে

সম্পাদকীয়

শীতকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক রূপ দেখা যায়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে, বিশেষ করে শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে উড়ে আসে অসংখ্য পাখি। পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সুনাম অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, পাখির অভয়ারণ্যটি এখন বিলুপ্তির পথে।

গত এক দশকে দেশে নানা ক্ষেত্রে যে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়েছে, তার বাইরে ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়টিও। বনজঙ্গল সাফ করে ও গাছগাছালি কেটে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরও অপরিকল্পিত উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে আসেনি তারা।

ফলে সেখানকার প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। সাধারণত প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসা শুরু করে ক্যাম্পাসটিতে। তবে বিগত দুই বছরে আগের তুলনায় পাখির সমাগম অনেক কমে এসেছে। জানুয়ারি মাসেও ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে পাখির দেখা নেই। নেই আগের মতো পাখিদের কিচিরমিচির।

প্রকৃতি-পরিবেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল। পাখি দেখার জন্য শীতকালে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমও হয় এ ক্যাম্পাসে। কিন্তু পাখির অভয়ারণ্য সুরক্ষায় যা যা করণীয়, তার সবকিছু সেখানে এখন অনুপস্থিত। কয়েক বছর আগেও অতিথি পাখি আসার আগে ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা হতো। এবার বেশির ভাগ জলাশয় এখনো অপরিষ্কার থেকে গেছে।

এমনকি কচুরিপানায় পুরো লেক ভরে গেছে, এমনটিও দেখা যাচ্ছে। যার কারণে নভেম্বরের শেষের দিকে একটি জলাশয়ে কিছু পাখি এলেও কিছুদিন পর তারা চলে যায়। পাখির সুরক্ষার জন্য আগে জলাশয়ের চারপাশে কাঁটাতারের মজবুত বেষ্টনী দেওয়া হতো, এবার তেমন কিছু করা হয়নি।

লেক বা জলাশয়ের পাড়ে ব্যাপক মানুষের সমাগম, উচ্চ শব্দে গানবাজনা করা, গাড়ির হর্ন দেওয়া আগের চেয়ে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে পাখি না আসাটাই স্বাভাবিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাসের লেক পরিষ্কার করা, পাড়ে বেড়া দেওয়া বা মানুষকে সতর্ক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামান্য পরিমাণ বাজেট দেওয়া হয়। লেকগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে এবং বাকি কাজগুলো করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে।

মোদ্দাকথা, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সেখানকার পাখির অভয়ারণ্য রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে চিন্তিত নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রাণ–প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হলেও তা কর্ণপাত করে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও হতাশার। এখন দেখার অপেক্ষা পাখির অভয়ারণ্যটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষ আসলে কী করে।