নির্মাণকাজ বন্ধ ও স্থানান্তরের পদক্ষেপ নিন

একটি রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় মানে আমরা কী বুঝি? সেটি যদি হয় আরও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের। সব সময় নেতা-কর্মীদের বৈঠক-জমায়েত, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তো আছেই। মাইক বাজবে, মিছিল হবে, হইচই হবে। একটি দলীয় কার্যালয়ের তো এটিই চিরায়ত দৃশ্য এ দেশে। এখন একটি সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গার ভেতরে যদি এমন একটি দলীয় কার্যালয় হয়, বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়। সেখানে কি আদৌ শিক্ষার পরিবেশ থাকে? এমন ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায়। সেখানে সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এবং কার্যালয়টির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। বিষয়টি দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গোড়াই-সখীপুর সড়কসংলগ্ন পশ্চিম পাশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়ের সীমানার কিছু অংশে সত্তরের দশকের শেষ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। এখন নতুন করে বিদ্যালয়ের বেষ্টনী ঘেঁষে কার্যালয়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের জমিতে অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণের বা বিদ্যালয়ের জমি দখলের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। তবে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও যুক্ত থাকায় তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করে দেখছেন। এলাকাবাসীর সবার সম্মতি আছে বলে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের বৈধতাও দিচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের জায়গায় দলীয় কার্যালয়ের অবস্থান নিয়ে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য মো. আদিল খান নিজেই বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে দুটি মামলা ছিল, যার রায় বিদ্যালয়ের পক্ষে হয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করে তিনি সেখানে দলীয় কার্যালয় নির্মাণে অবস্থান নিয়েছেন।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০। এখন এসব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য হচ্ছে, মামলায় জিতলেও এখনো জমির বুঝে পাননি তাঁরা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।

আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নির্মাণ বন্ধ করতে দ্রুত উদ্যোগ নেবে। সেই সঙ্গে দলীয় কার্যালয়টি অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর করা হোক। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এমন কোনো দলীয় কার্যালয় থাকার সুযোগ নেই।