পাহাড় কাটা, ফসলি জমির মাটি কাটা আর নদীর বালু তোলা—এ তিন কর্মকাণ্ড দেশের পরিবেশের ওপর নীরব সর্বনাশ ডেকে আনছে। এসবের বিরুদ্ধে খুব কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখি না।
যে জরিমানা দেওয়া হয় বা যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়, তার খরচ তারা অল্প সময়ের মধ্যেই তুলে ফেলতে পারে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেকের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না।
ফলে পরিবেশের ক্ষতি সাধনকারীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তার নমুনা পাওয়া যায় কক্সবাজারের উখিয়ায়। সেখানে অবৈধভাবে সরকারি পাহাড় কাটার সময় তিন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুহুরী পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জায়গা করে দিতে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় এমনিতেই পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে, সেখানে এখন দেদার পাহাড় কাটা চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে সেই কাজ করে যাচ্ছেন। শ্রমিক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের।
কম খরচে পাওয়া যায় বলে সেখানকার অনেক কাজে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মুহুরী পাড়ায় পাহাড় কাটার জন্য এভাবে ৩০-৩২ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী আবদুল মান্নান ও নেছার আহমদের নেতৃত্ব কয়েকজন ব্যক্তি।
কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে পাহাড় নিধন চলছিল। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে স্থানীয় লোকজন পাহাড় নিধনের ঘটনা বন বিভাগকে অবহিত করলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো শ্রমিকদের মৃত্যু এড়ানো যেত।
অথচ পাহাড় নিধনের ঘটনাটি জানা ছিল না বলে দাবি করেন উখিয়া বন বিট কর্মকর্তা গাজী মো. শফিউল আজম। তিনি আরও বলেছেন, পাহাড় নিধনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কথা হচ্ছে এলাকাবাসীর থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরও কেন ব্যবস্থা নিলেন না তিনি। এখানে কি তাঁর অবহেলার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে না?
এখন কখন মামলা করা হবে, কখন দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে? আমরা জানতে পারছি, পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ভুলু ও নুর মোহাম্মদ ইতিমধ্যে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
পাহাড় কাটার কারণে সেখানকার কয়েকটি পরিবারের বসতি ঝুঁকিতে পড়েছে। পাহাড়খেকোদের থামাতে না পারলে সেখানে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আর সেটা হতে দিতে না চাইলে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের আরও তৎপর হতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।