অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

সরকারি কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জন্য বরাদ্দ জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সরকারি অফিসে এ তেল চুরি নিয়ে আছে সিন্ডিকেটও। তেল চুরির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের ক্ষেত্রে। সেখানকার ভারী যানযন্ত্রের ডিজেল চুরির মাধ্যমে বছরে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ডিএনসিসির আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের (স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) ১০টি ভারী যানযন্ত্রের (এক্সকাভেটর, চেইনডোজার ও টায়ারডোজার) জন্য গত ১ আগস্ট ২ হাজার ৭৭০ লিটার ডিজেল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু যানযন্ত্রগুলোতে সেদিন ডিজেল ভরা হয় ২ হাজার ৩৬৬ লিটার। বাকি ৪০৪ লিটার ডিজেল আত্মসাৎ করেন ল্যান্ডফিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি কোনো যানযন্ত্রের জন্য পুরো ডিজেলই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব জ্বালানির লিটার ১০৭ টাকা হিসাবে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ২২৮ টাকা। ল্যান্ডফিলের জন্য বরাদ্দ জ্বালানির যাবতীয় রসিদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিএনসিসিতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্যে ধারণা করা যায়, বছর বছর ধরে এ তেল চুরির ঘটনা ঘটছে। তাঁরা বলেন, দুইভাবে ডিজেল চুরির টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রথমটি, ফিলিং স্টেশন থেকে পরিমাণে কম ডিজেল নিয়ে। এর সুবিধা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কালেকশন অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন (সিঅ্যান্ডটি) শাখার প্রকৌশলীরা পান। দ্বিতীয়টি, কম সময় যানযন্ত্র চালিয়ে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম সময় যানযন্ত্র চালিয়ে জ্বালানি বাঁচান অপারেটররা (চালক)। পরে কৌশলে বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দেন।

তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, তেল চুরির একটি সিন্ডিকেট আছে এখানে। একজন কর্মকর্তা স্বীকারও করেছেন তেল চুরি বাবদ প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাগে পান তিনি। সিঅ্যান্ডটির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ওই টাকা দেওয়া হয়। উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান বলেন, ‘জ্বালানি নিয়ে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে কি না, ব্যক্তিগতভাবে এ নিয়ে কাজ করছি। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে চাই। শিগগিরই এটা ঘটবে।’ আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই।

শুধু আমিনবাজার ল্যান্ডফিল নয়, সিটি করপোরেশনের গোটা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্য সব কার্যক্রমে তেল চুরির ঘটনা ঘটছে কি না, খতিয়ে দেখা হোক। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ভবিষ্যতে এ ধরনের চুরির ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।