বাঁশখালীর পর্যটনকেন্দ্রটির যত্ন নিন

সম্পাদকীয়

দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে পর্যটনের বড় একটা সম্ভাবনা আছে। যদিও বাংলাদেশে পর্যটনের নামে প্রকৃতি বিনষ্টই হয় বেশি। তবে বাঁশখালীতে প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ২০ বছর আগে একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি সেটি ছিল একটি পর্যটনকেন্দ্রও। পর্যটককে আকৃষ্ট করতে ঝুলন্ত সেতুসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন সেই ইকোপার্ক অনেকটা পরিত্যক্ত। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। এটি কাম্য ছিল না।

চুনতি অভয়ারণ্যের সঙ্গে যুক্ত বাঁশখালীর এ বনাঞ্চলে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া নামে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। মূলত কৃষিজমিতে সেচ প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের ঢালুতে বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেখানে। এর ফলে বামেরছড়া ও ডানেরছড়ায় কৃত্রিম লেক গড়ে ওঠে। সেই দুটি লেক ছাড়াও সেখানে ছোট-বড় অনেক পাহাড়, খাল ও ছড়া রয়েছে। কয়েক শ প্রজাতির উদ্ভিদ ও গাছগাছালি এবং কয়েক হাজার বন্য প্রাণীতেও সমৃদ্ধ সে বনাঞ্চল। বাংলাদেশ সরকার ওই বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা, ইকোট্যুরিজম ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে সেখানে একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলে, যেটির নাম বাঁশখালী ইকোপার্ক। তখন থেকে এটি দেখাশোনার দায়িত্ব পায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

সেখানে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা ছাড়াও একাধিক পিকনিক সেট, দোলনা, শৌচাগার, বসার স্থান, স্লিপার, দ্বিতল বিশ্রামাগার, পাখি ও বন্য প্রাণী অবলোকনের জন্য দুটি টাওয়ারসহ বিনোদনের আরও কিছু স্থাপনা ও ব্যবস্থা নির্মাণ ও চালু করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে প্রায় সব স্থাপনাই জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি পার্কের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতুও বেহাল। এটির কাঠের পাটাতন নতুন লাগানো হলেও এক পাশে কাত হয়ে আছে।

একটা সময় ইকোপার্কটিতে বিপুল মানুষ যেতেন ঘুরতে। চট্টগ্রাম শহরসহ আশপাশের উপজেলা থেকেও পর্যটকেরা আসতেন। এরপর ইকোপার্কটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন দর্শনার্থীরা। শুক্রবার কিছু দর্শনার্থী এলেও তাঁরা মনে করেন, এখানে এসে গাড়িভাড়াটাও গচ্চা গেল! এ ছাড়া ইকোপার্কটি ঘিরে সেখানে কিছু কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছিল, সেখানেও নেমে এসেছে হতাশা। সরকারও এখান থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে।

ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, পার্কের ঝুলন্ত সেতুসহ ছোটখাটো উন্নয়নে তাঁরা কাজ করতে পারেন। তবে বড় কিছু করার সুযোগ তাঁদের নেই।

আমরা আশা করব, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পর্যটন কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে ইকোপার্কটির উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারে। তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে, সেটিই কাম্য।