চিকিৎসক-নার্স ছাড়া এভাবেই চলবে?

দেশের প্রত্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল না থাকার খবর নতুন নয়। প্রথম আলো নিয়মিতই গুরুত্বের সঙ্গে এ সংকট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সম্পাদকীয়ও লিখে থাকে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক, জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বান্দরবানের থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও তেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। চিকিৎসক ও নার্সের সংকটের কারণে হাসপাতালটি থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে মানুষ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

দেশের সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা বলা হয়ে থাকে বান্দরবানের থানচিকে। ফলে সেখানকার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও জনবল থাকা জরুরি। কারণ, এসবের অভাবে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা না পেলে তাকে আসতে হয় বান্দরবান সদরে। এত দূর থেকে রোগী নিয়ে বান্দরবানে আসা সবার পক্ষে সম্ভবও হয় না। দেখা যাচ্ছে, জেলা সদর থেকে ৮১ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা পরিষদের কিছু দূরে সাঙ্গু নদের তীর ঘেঁষে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত হাসপাতালটিকে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, সৌরবিদ্যুতের সুবিধাসহ আধুনিক প্রায় সব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদসহ (টেকনিশিয়ান) ন্যূনতম জনবল নেই। এত সুন্দর পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ন্যূনতম জনবল না থাকাটা কোনোভাবে মানা যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (ইউএইচএফপিও) মাত্র দুজন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। ১৮ জন নার্সের পদে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এখন এই কয়জন চিকিৎসক ও নার্সের পক্ষে পুরো হাসপাতালের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। আর রাতের বেলায় রোগীরা চিকিৎসক, নার্স কাউকে খুঁজেও পান না। অন্যদিকে থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেছেন, জনবলসংকট ও দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল সেবাব্যবস্থার কারণে হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা মিলবে না, তাই সহজে কেউ যেতেও চায় না। 

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিসংখ্যানবিদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ৫০ শয্যার হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে মাসে ১ হাজার ৫০০ রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু হাসপাতালটিতে দেড় শ থেকে দুই শ রোগী সেবা নিতে আসেন। এ থেকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সত্যতা প্রতীয়মান হয়। রোগীর পরিসংখ্যানও বলছে, যত মানুষ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসার কথা, তা আসছে না।

পাহাড়ি অঞ্চলে দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি পূরণে অগ্রাধিকার কাম্য। ফলে থানচির স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স যুক্ত করা হোক।