বাংলাদেশের জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে বড় একটি কারণ পরিবেশগত। দেশের অনেক নদী-খাল দূষিত-দখল হতে হতে মৃতপ্রায়। সেগুলো উদ্ধার বা পুনরুদ্ধার নিয়ে কখনো কোনো মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয় না। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয় সরকারি-বেসরকারিভাবে। কিন্তু সেসবের প্রভাব খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এরপরও এমন প্রচেষ্টা এখনো চলমান আছে, সেটি আশাব্যঞ্জক। ময়মনসিংহে একটি খালের পানিপ্রবাহ ফেরাতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি সেটি সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের বড় একটি অংশ সাম্প্রতিক বন্যায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই অঞ্চলের নদী-খালগুলোর প্রবহমান রাখা জরুরি। এ জন্য নদী-খালগুলো খনন করা ও দখলমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। ময়মনসিংহের ভালুকায় দখল-দূষণে বিপর্যস্ত ধোবাজান খালের ক্ষেত্রে এমন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার খালটির প্রবাহ ফেরানোর কাজ শুরু হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পোনাশাইলের খিরু নদ থেকে ধোবাজান খালটি উৎপত্তি হয়ে মল্লিকবাড়ির ধামশুর মৌজায় খিরু নদে মিলিত হয়েছে। অন্তত আট কিলোমিটার খালটি উপজেলার মল্লিকবাড়ি ও ভালুকা ইউনিয়নের কাঁঠালী ও ধামশুর গ্রামের ভেতর দিয়ে খালটি বয়ে গেছে। এই খাল দিয়ে এলাকার পানি নেমে যেত। কিন্তু পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে অবৈধভাবে নির্মিত স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে ফেলে অসাধু লোকজন। এতে ৫০-৬০টি পরিবার সারা বছর কষ্টে পড়ে। এলাকার পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় প্রায় সারা বছর পানিতে নিমজ্জিত থাকে ফসলি জমি। এলাকাটিতে চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে থাকে, পুরো জমি যেন প্রভাবশালীরা কিনে নিতে পারে, সে জন্য এই অবস্থা করা হয়।
স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহান লাবীবের নেতৃত্বে খননযন্ত্র নিয়ে কাঁঠালী এলাকায় যায় প্রশাসন। খনন করে খালটির প্রবাহ আটকে রাখা স্থানটি কাটতে শুরু করেন। ফারহান লাবীব বলেন, বাটারফ্লাই নামে একটি কোম্পানি খালটি ভরাট করে দখল করে নেয়। এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন। ২০১৭ সালের পর থেকে এ অবস্থা চলছিল। ঘটনাটি জানার পর খালটিতে প্রবাহ ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০০ মিটার কেটে দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ মিটারের মতো রয়েছে, সেটিও অপসারণ করা হবে।
আমরা উপজেলা সহকারী কমিশনারের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। কোনো ধরনের অবৈধ অবকাঠামো বা স্থাপনা উচ্ছেদে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, খাল পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হবে এবং পরে সেটি যেন আবার দখল হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করা হবে। উপজেলার অন্য খালগুলো দখল-দূষণের ক্ষেত্রেও এমন কার্যক্রম চলমান থাকবে।