অচলাবস্থার দ্রুত অবসান হোক

সম্পাদকীয়

দুই বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ ও আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত অঙ্গনে কয়েক দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের শাস্তির দাবিতে আইনজীবীরা প্রথমে তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। পরে তাঁদের কর্মবিরতি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে তিনটি মামলা গ্রহণ না করায় আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হন। ১ জানুয়ারি মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে; যাতে জেলা জজ শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়া হয়।

৫ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলে তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।

এদিকে মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ বিচারকাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির ২১ জন আইনজীবীকে তলব করেছেন। ২৩ জানুয়ারি তাঁদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন আদালত।

এর আগে ৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। একই দিন আগের ঘটনা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান আইনজীবীরা। ৫ জানুয়ারি সকালে কর্মচারীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও আইনজীবীদের কর্মবিরতি অব্যাহত আছে।

কোনো মামলা বা অভিযোগ নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনজীবীদের মতভেদ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে জন্য বিচারালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি কিংবা একজন বিচারক সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা কোনোভাবেই উচিত নয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন; যদিও সমস্যা সমাধানে তিনি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা যায়নি। উচ্চ আদালত বিষয়টি নজরে এনে যে আদেশ দিয়েছেন, সে বিষয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। বিচারালয়ের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা আদালতের পবিত্র দায়িত্ব।

প্রশ্ন হলো, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের অচলাবস্থা চলতে থাকবে? সেখানকার বিচারপ্রার্থীরা তো কোনো অন্যায় করেননি। তাহলে কেন তাঁরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন? সেখানকার বিচারক ও আইনজীবী সমিতি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সুরাহার উদ্যোগ নিলে সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু তাঁরা তা করেননি।

আইনজীবীদের কয়েকজনের বাড়াবাড়ি যে পরিস্থিতিকে নাজুক করেছে, সে কথা একাধিক আইনজীবী প্রথম আলোর কাছে স্বীকারও করেছেন। আইনজীবীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত হলে তাঁরা আইনি পথেই তার প্রতিকার চাইতে পারতেন। কিন্তু তাই বলে তাঁরা এমন কিছু করতে পারেন না, যা আদালত অবমাননা ও একজন নারী বিচারকের সম্মানহানি হয়।

অবিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের অচলাবস্থার অবসান হোক।