নদ–নদী দূষণ হবে, দখল হয়ে যাবে, নাব্যতা হারাবে—এই সবই এ দেশে এখন করুণ বাস্তবতা। দেশে নদ–নদী ও খাল খননে যে পরিমাণ প্রকল্প নেওয়া হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়, অনেক জায়গায় কেন এর সুফল মেলে না, তা নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করে না।
জনগণের অর্থে এত বড় বড় প্রকল্প কেন ব্যর্থ হয়, তার যথাযথ মূল্যায়নও করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সেই চিন্তা ও ভাবনার ঘাটতিই যেন প্রকাশ পায় ফরিদপুর শহরের প্রাণ কুমার নদকে বাঁচানোর প্রকল্প বাস্তবায়নে। আড়াই শ কোটি টাকা খরচ করে নদটি পুনঃখননের কাজ শেষের পথে। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই পুনঃখননের প্রকল্প নেওয়া হয়, তার কিছুই অর্জিত হয়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দখল-দূষণ কমিয়ে নাব্যতা ফেরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৮ সালে কুমার নদ পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। ৩০ জুন এ প্রকল্প শেষ হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমি সেচসুবিধা পাবে, এমনটিই কথা ছিল। যার মাধ্যমে প্রতিবছর ৩৪ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়। কিন্তু খননের কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় সেই সুফল মেলেনি। এমনকি নদের দখল-দূষণ না কমে উল্টো বেড়েছে। নাব্যতাও আর ফিরেনি।
এ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পেছনে মূল কারণ তিনটি। এক. দখলদারদের উচ্ছেদ করতে না পারা, ২. মাতৃনদী পদ্মার সঙ্গে সংযোগ না ঘটানো এবং ৩. ময়লা–আবর্জনা না ফেলার জন্য শহরবাসীর মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতামূলক প্রচারণা না চালানো।
ফরিদপুর পাউবোর ২০২০ সালের জরিপে কুমার নদের ফরিদপুর সদরে ১ হাজার ৮৮৯ জন দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়। ওই বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায় পাউবো। কিন্তু শহরের বিসর্জন ঘাট বস্তি এলাকায় ৯টি ছাপরা উচ্ছেদ করে পাউবো অভিযান শেষ করে। এ থেকেই বোঝা যায়, এ প্রকল্প কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
কুমার নদকে বাঁচানোর জন্য জরুরি ছিল, মাতৃনদী পদ্মার সঙ্গে সংযোগ ঘটানো। কিন্তু মাত্র ২০০ মিটার অংশে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীদের আপত্তির কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
আর ময়লা–আবর্জনা না ফেলার জন্য সাইনবোর্ড লাগানো কার্যকর কিছু নয়, সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে। এখন ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে, কিন্তু এ সমস্যাগুলো ঠিকই থেকে গেল।
তাহলে কেন এ প্রকল্প নেওয়া হলো? কারা এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হলো? যেভাবেই হোক কুমার নদকে বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের আগে নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা ও যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি।