১০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও আজিমপুর অঞ্চলের সব কোম্পানির বাসে ই-টিকেটিং চালু করা স্বস্তির খবরই বটে। এতে ঢাকার গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে এত দিন যে নৈরাজ্য চলছিল, নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করার যে অভিযোগ ছিল, তার অবসান ঘটবে বলে আশা করা যায়।
৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরে সব কোম্পানি অর্থাৎ ৬০টি কোম্পানির ৩ হাজার ৩১৪টি বাস ই-টিকিটের আওতায় নিয়ে আসার কথা আছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী শহর থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা ৩৭টি কোম্পানির বাসসহ মোট ৯৭ কোম্পানির ৫ হাজার ৬৫০টি বাস আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই-টিকিটের আওতায় আনার কথা জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকেটিং চালু হয়েছিল। ১৩ নভেম্বর মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানির বাসে ই-টিকিট চালুর মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের আধুনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে।
যেকোনো নতুন পদ্ধতি চালু করতে কিছু সমস্যা হয়। ই-টিকেটিংয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যেমন শুরুতে অনেক যাত্রী ই-টিকিট না নিয়ে পুরোনো পদ্ধতিতেই ভাড়া দিতে চেয়েছেন। কোথাও কোথাও পজ মেশিন বিকল হওয়া ও আগের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে সার্বিকভাবে যাত্রীরা নতুন পদ্ধতিকে স্বাগতই জানিয়েছেন। একজন যাত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, আগে অনেক বাসে টিকিটের চল ছিল না। বাসের সুপারভাইজাররা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করতেন। ই-টিকেটিংয়ের ফলে সেটি আর সম্ভব হবে না।
অস্বীকার করা যাবে না যে এত দিন যে পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হতো, সেটা ছিল যাত্রীদের জন্য বিরক্তিকর ও হয়রানিমূলক। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসের কর্মীদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। নিত্য যানজটের ঢাকা শহরের গণপরিবহনকে অবশ্যই নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
সেদিক থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বিত পদ্ধতিতে বাস চালুর উদ্যোগকেও স্বাগত জানাই। এটি প্রথম শুরু করেছিলেন উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চারটি স্কুলে বাসসেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকেও ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
এ উদ্যোগ শহরজুড়ে এবং সব বড় স্কুলে চালু করা গেলে শহরের যানজট পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরের স্কুলবাস সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। ভবিষ্যতে প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে এক এলাকার শিক্ষার্থীদের অন্য এলাকায় যেতে না হয়।
সরকার যতই ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান দিক না কেন, আমাদের পরিবহনব্যবস্থা এখনো চলছে সেকেলে পদ্ধতিতে। ট্রেন, বাস কোনোটারই আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশেই রেলওয়েকে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অথচ বাংলাদেশ রেলওয়েকে ভঙ্গুর ও লোকসানি পরিবহন করে রাখা হয়েছে। রেলযাত্রীদের অনলাইনে টিকিট করার যে ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে, তা–ও সফল হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ যাত্রী এ সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ঢাকার গণপরিবহনে ই–টিকেটিং চালুর পর এর আধুনিকায়নের প্রতিও পরিবহনমালিকেরা গুরুত্ব দেবেন আশা করি। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে এ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা ঢাকায় একটি আধুনিক শহরের মতো গণপরিবহনব্যবস্থা দেখতে চাই। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান দিচ্ছেন, তখন রাজধানীতে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গণপরিবহন চলতে পারে না।