জমি অধিগ্রহণ না করে প্রকল্প কেন

সম্পাদকীয়

দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আবার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে যেভাবে বলা হয় বা যেভাবে পরিকল্পনা করা হয় বা যে অনুসারে অর্থ ব্যয় হয়, দিন শেষে প্রকল্পটি যথাযথ হয় কি না, তা নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন উঠতে দেখা যায়। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ‘বিশ্বমানের’ একটি সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে। প্রায় ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় লেনের সড়কটি যেভাবে নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছিল, কাজের শেষে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। এ নিয়ে শহরটির সচেতন নাগরিক মহল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজশাহী নগরের তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত সড়কটি নগরের প্রধান প্রবেশদ্বার। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের এই ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশ ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রায় ৯৪ কোটি টাকা বাজেটের সড়কটিতে কথা ছিল, ২ মিটার সড়ক বিভাজক থাকবে, অযান্ত্রিক যানবাহন (সাইকেল, রিকশা) চলাচলের লেন থাকবে; হবে চওড়া ফুটপাত ও নালা। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছিল। কাজের শেষের দিকে এসে দেখা যাচ্ছে, সড়কটি কোথাও সরু হয়ে গেছে, কোথাও সরু হয়েছে নালা ও ফুটপাত। সড়ক বিভাজকও যথাযথভাবে করা হয়নি।

সরকারের অর্থায়নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা। মূলত জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় পরিকল্পনামতো সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে না। এতে যানজটের ভোগান্তি কমবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়বে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও জানাচ্ছে, সিটি করপোরেশন জমি অধিগ্রহণ না করেই রাস্তার কাজে এসেছে। তাই সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের বক্তব্য, রাস্তার পাশের জমিগুলো অধিগ্রহণের আবেদন করা হলেও অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী, যিনি আবার প্রকল্পটির পরিচালকও, তিনি বলছেন, ১০-১২ বছর পর যদি অধিগ্রহণ করা যায়, তখন হয়তো পুরোপুরি রাস্তা চওড়া করা যাবে। এভাবে সড়ক নির্মাণ করা হলেও ব্যয় একই থাকছে বলে তিনি জানান।

প্রশ্ন হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণ না করে কেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? এটি অর্থের বিশাল অপচয়। শহরটির সচেতন নাগরিক মহলই বলছে, এই রাস্তা একসময় ভেঙে আবার নতুন করে করতে হবে। আবার পরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও কীভাবে ব্যয় একই থাকছে? এটি আরও বেশি গুরুতর। নগরবাসীকে ‘বিশ্বমানের’ সড়কের স্বপ্ন দেখিয়ে সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।