বাংলাদেশের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা

সম্পাদকীয়

বিবিসির ২০২৪ সালের ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন এক বাংলাদেশি। তাঁর নাম রিকতা আখতার বানু। বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদের পড়াশোনার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি উঠে এলেন বিবিসির এ তালিকায়। বিশ্বের একটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমের মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় স্থান করে নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন। আমরা রিকতা বানুর এ
অর্জনে গর্বিত।

বিবিসি ২০২৪ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকাটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে। পাঁচটি বিভাগে (ক্যাটাগরি) ১০০ নারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিভাগগুলো হলো জলবায়ুকর্মী; সংস্কৃতি ও শিক্ষা; বিনোদন ও ক্রীড়া; রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের রিকতা বানু। এ তালিকায় রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নারীসহ নভোচারী, অলিম্পিক অ্যাথলেট, জলবায়ুকর্মী, লেখকসহ আরও অনেকে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রিকতা আখতার বানু (৫২) পেশায় সিনিয়র স্টাফ নার্স। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠাঁই হয়নি তাঁর বাক্‌প্রতিবন্ধী মেয়ের। তখন নিজেই একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন। এ কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। স্কুলের জন্য তাঁর স্বামী জমি দান করেন। ২০০৯ সালে সেই জমিতে টিনের একটি ঘরে ৬৩ প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে চালু হয় স্কুলটি। কিন্তু শিক্ষক পাচ্ছিলেন না। প্রতিবন্ধী শিশুদের কেউ পড়াতে চাইতেন না। পরে তাঁর ব্যাকুলতা দেখে দেবর পড়াতে রাজি হন। পরেও কয়েকজন শিক্ষক যুক্ত হন। এখন সেই স্কুলে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৯৪ শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। আধা পাকা ভবনের স্কুলটিতে এখন শিক্ষক আছেন ২১ জন। রিকতা এখন স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভ্যানে করে বাসা থেকে নিয়ে আসা ও ক্লাস শেষে দিয়ে আসার ব্যবস্থাও আছে। শিক্ষকেরা নিজেরা চাঁদা তুলে টিফিনের ব্যবস্থাও করে থাকেন। প্রত্যন্ত একটি গ্রামে প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশোনার জন্য সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার যে অসাধ্য সাধন করেছেন রিকতা বানু, তা এককথায় অভাবনীয়। তিনি শুধু নারীদের জন্যই নন, সবার জন্যই অনুপ্রেরণার। আমরা তাঁকে অভিবাদন জানাই।

রিকতা বানুর স্কুলটিতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য ব্যায়ামাগারে তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই। প্রয়োজন বিনোদনের সরঞ্জামও। আধা পাকা স্কুল ভবনটির আরও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবে। এটাই হবে রিকতা বানুর প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন।