অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের চার মামলার কোনোটারই বিচার শুরু হয়নি। তিন বছর আগে আওয়ামী লীগে ‘শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে পরিচিত অভিযানে আত্মগোপন অবস্থায় গ্রেপ্তার হন তিনি। পুলিশ, র্যাব ও দুদক তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, অস্ত্র আইন, মানি লন্ডারিং ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা করে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, চার মামলায় জামিনে মুক্ত হওয়ার পর গত শুক্রবার দলবল নিয়ে রাজপথে বড় ধরনের মহড়া দেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা সম্রাট। মোটরসাইকেল, গাড়ি ও পিকআপ ভ্যানে করে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান তিনি।
সে সময় অনুগত নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে স্লোগান দেন। ছুটির দিনে ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারসহ আশপাশের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত একজনের এ ধরনের মহড়া স্বভাবতই জনমনে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ সাড়ম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলে। একের পর এক অভিযানে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে কারা কীভাবে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন এবং সেই টাকার বড় একটা অংশ পাচার হয়েছে, সে চিত্র উঠে আসে। অভিযানে বেরিয়ে আসে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাংশ জুয়া, ক্যাসিনো, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া খুবই ধীরগতিতে চলছে। অভিযানে সম্রাট ছাড়াও আরমান, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, সেলিম প্রধানসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে করা ৫৭ মামলার মধ্যে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মামলার অভিযোগ গঠিত না হওয়ায় বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। মাত্র একটি মামলার রায় হয়েছে।
সম্রাটের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও একটি মামলারও অভিযোগ গঠিত হয়নি। এ ছাড়া তদন্ত শেষ না হওয়ায় মানি লন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেননি আদালত। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা টাকার বড় অংশই তিনি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে খরচ করেন বলে অভিযোগ আছে। সিআইডির ভাষ্য, সম্রাটের পাচার করা অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হলেও তার জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
সম্রাট গুরুতর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রশ্ন হলো একজন গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কীভাবে দলবল নিয়ে মহড়া দিতে পারেন। এর আগেও নানা সময় দণ্ডপ্রাপ্ত কিংবা বিচারাধীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারাগারের বদলে চিকিৎসার নামে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের আয়েশি জীবনের নানা তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে।
সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে দুদক। আইন অনুযায়ী, আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার আগপর্যন্ত জামিনযোগ্য যেকোনো মামলায় জামিনের অধিকার রয়েছে।
সম্রাটসহ ক্যাসিনো অভিযানের সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার কোনোটাই কম গুরুতর নয়। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সম্রাটসহ অন্যরা দিনের পর দিন এ ধরনের অপরাধ করে গেছেন। দীর্ঘদিনেও আলোচিত এসব মামলার বিচার শুরু না হওয়াটা যুগপৎ হতাশা ও উদ্বেগের। বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ন্যায়বিচারের অন্তরায়। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারই সবার কাম্য।