চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের চিত্র হতাশাজনক

দেশের পূর্বাঞ্চল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এতে বেশ কয়েকটি জেলা উল্লেখযোগ্যভাবে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে আছে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর। বন্যা চলাকালে এসব এলাকায় উদ্ধারপ্রক্রিয়া ও ত্রাণ কার্যক্রমে যেভাবে সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেটিও ছিল নজিরবিহীন। কিন্তু বন্যার পর পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। বরাদ্দের অর্থের পরিমাণও হতাশাজনক। ফলে বন্যার সাড়ে তিন মাস পরেও অনেক মানুষ ভাঙা ঘর নিয়ে কষ্টে আছে। 

সেপ্টেম্বরের শুরুতে অক্সফাম বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ ১১ জেলার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাস্তুচ্যুত হয় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। এই বন্যায় প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। দুই জেলার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। 

এখন ক্ষতির পরিমাণ অনুসারে বরাদ্দ নিতান্তই কম বলা যায়। বিশেষ করে ফেনীর ক্ষেত্রে এমনটি আমরা দেখছি। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার অনেকের ভাগ্যে তা-ও জোটেনি। পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে সেই ক্ষত সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে। ফুলগাজী উপজেলার জিএম হাট ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ঘর মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। তিন মাস পার হয়েছে। এখনো কোনো অর্থসহায়তা পাননি। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলের আয়ে কোনোরকমে চলছে সংসার। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন। প্রতি মাসে কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের বন্যায় ফেনী জেলার ৬ উপজেলায় ৬৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন এবং নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন মাত্র ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং ১২ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে, যা দিয়ে মাত্র ২০০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে মডেল ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও সেটির জন্যও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

চাহিদা অনুযায়ী এত অল্প বরাদ্দ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সব মিলিয়ে বন্যার পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া সন্তোষজনক নয়। আমরা আশা করব, সরকার এদিকে মনোযোগী হবে। আর সময়ক্ষেপণ না করে বরাদ্দ ছাড়সহ দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।