বড়লেখার দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক

সম্পাদকীয়

সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়, মানুষে মানুষে সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় নেতৃত্বগুণও। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াসও সে কারণে। সংগঠনগুলো নিয়মিত–অনিয়মিতভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এর ফলও নানাভাবে প্রতিফলিত হয়। তবে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় একসঙ্গে ৬৫টি সংগঠন একত্র হয়েছে সড়কের নিরাপত্তায়। এতগুলো সংগঠনের একই উদ্দেশ্যে একসঙ্গে হওয়া অভাবনীয়। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক।

বড়লেখা একটি পর্যটন এলাকা। এখানে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর ও চা-বাগান আছে। ফলে পর্যটক আগমনের কারণে এ সড়কে যানবাহন চলাচলও বেশি। চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের চান্দগ্রাম-বড়লেখা অংশে অবাধে বেড়ে উঠেছে নানা জাতের ঝোপঝাড় ও বুনো গুল্মলতা। এতে পায়ে চলার পথ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে তৈরি হয়েছে ঝুঁকি।

উপজেলার ৬৫টি সংগঠনের সদস্যরা মিলে সড়কটির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে নেমে পড়েন। চান্দগ্রাম থেকে বড়লেখা উত্তর চৌমোহনা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। সঙ্গে সাতটি যাত্রীছাউনি পরিষ্কার ও রং করা হয়েছে। এমন কার্যক্রমে স্থানীয় লোকজনের প্রশংসাও পাচ্ছেন তাঁরা। গাড়িচালকদের বক্তব্য, পরিষ্কারের আগে সড়কের দুই পাশ ঝোপঝাড়ে ঘেরা ছিল। সড়ক ছোট হয়ে গিয়েছিল, দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল। কখনো কখনো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তবে এখন সড়কের দুই পাশ পরিষ্কার হওয়ায় কিছুটা প্রশস্ত হয়েছে। এমন কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ।

এ কাজ করা সহজ হয়েছে মূলত উপজেলার সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত থাকায়। এই অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবার সঙ্গে মতবিনিময় ও পরিকল্পনা ভাগাভাগি করা হয়। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মূলত আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন কার্যক্রমের ফলে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল সংগঠনগুলো, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সাম্প্রতিক বন্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর অসামান্য ভূমিকা আমরা দেখেছি। কিন্তু সম্মিলিত কার্যক্রমের অভাবে ত্রাণ বিতরণে কোথাও কোথাও ঘাটতির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়। শুধু ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রেই নয়, সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি সম্মিলিত বন্ধন ও যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। সাংগঠনিক দক্ষতা ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলোর আরও বেগবান, ফলপ্রসূ ও কার্যকর হওয়া সম্ভব। বড়লেখার এমন উদাহরণ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক।