একটি পৌরসভা কি এভাবেই চলবে

সম্পাদকীয়

কোনো এলাকা যখন পৌরসভাভুক্ত হয়, তার মানে সেখানকার বাসিন্দারা কিছু নাগরিক সেবা পাবেন। দেশে এমন পৌরসভাও আছে, কয়েক দশক পার হয়ে গেলেও পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা গড়ে তুলতে পারেনি। একের পর এক পৌরসভা গড়ে তোলা হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহসহ নানা সুবিধা তৈরিতে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। পৌরবাসীরা পৌরকর দিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা কয়েক মাস ধরে পানি পাচ্ছেন না। এতে চরম দুর্ভোগ তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পৌরসভাটিতে পানির গ্রাহক প্রায় চার হাজার। কয়েক মাস ধরে তাঁরা পানি পাচ্ছেন না। খাওয়ার জন্য তাঁদের পানি কিনতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন নারীরা। পুরুষেরা দূরে গিয়ে পুকুরে গোসল করে এলেও নারী তা পারছেন না। গৃহস্থালির কাজে পুকুরের ময়লা পানি ব্যবহার করায় অনেক পরিবারে অসুখবিসুখ লেগেই আছে। আরও হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, পানি না পেলেও ঠিকই পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে তাঁদের। যদিও পৌর মেয়রের অভিযোগ, অনেক গ্রাহক ঠিকমতো পানির বিল ও পৌরকর দেন না। পৌরসভার যে আয়, তা দিয়ে ঠিকমতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়াও কষ্টকর।

চৌমুহনীতে তীব্র পানিসংকটের কারণ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বলেন, ‘পাতালে (ভূগর্ভে) পানি না থাকলে আমি কী করব? তা ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পানি উত্তোলন করা যায় না। আবার পাইপলাইনেও সমস্যা রয়েছে। নতুন আরও পাম্প, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রয়োজন।’

তবে এমন অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরির জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষও কম দায়ী নয়। কারণ, পৌরসভার কর্মকর্তারাই বলছেন, পানি সরবরাহের যেটুকু সামর্থ্য পৌরসভার রয়েছে, সেটুকুও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় না। তা ছাড়া পাইপলাইন বসানো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে কোনো এলাকার গ্রাহক পানি পান, কোনো এলাকায় মোটেও পানি পাওয়া যায় না। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মূল পাইপলাইনের সঙ্গে অবৈধভাবে পাম্পের সংযোগ দিয়ে সরাসরি পানি তুলে নেন। এতে সাধারণ গ্রাহকের কাছে আর পানি পৌঁছায় না। অবৈধ ওই সব সংযোগের সঙ্গে পৌরসভার লোকজনও জড়িত।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখন পানিসংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে দেখছে সরকারি বড় কোনো প্রকল্পকে। এর জন্য তারা নানা চেষ্টাও করে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে, এমন প্রকল্প পাওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাহলে কি মাসের পর মাস পানি ছাড়াই থাকবেন পৌরসভাটির বিপুলসংখ্যক মানুষ? পৌর মেয়র অনেক গ্রাহককে অভিযুক্ত করছেন ঠিকই কিন্তু তিনি কেন পানি সরবরাহে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করছেন না? চৌমুহনীতে পানির সুষ্ঠু বণ্টন ও যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।