স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

সম্পাদকীয়

বন্যা–পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে পানিবাহিত রোগ মোকাবিলা। দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার পর তেমন পরিস্থিতিই আমরা দেখতে পাচ্ছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। ফেনীতে ডায়রিয়া রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে খোলা চত্বরে তাদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বাড়তি রোগী সামাল দেওয়ার মতো চিকিৎসক ও নার্সের অভাব রয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধেরও সংকট আছে। এমন পরিস্থিতিতে আসলে কীভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্ভব?

বন্যার পর বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। সেই সংকট থেকে তৈরি হয় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বন্যার পর থেকে কবলিত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া রোগীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফেনী জেলার ৬ উপজেলা থেকে ডায়রিয়ার রোগীরা ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। মূলত ২৫ আগস্ট থেকে ডায়রিয়া রোগী আসা শুরু হয়েছে এ হাসপাতালে। তবে গত দুই দিনে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

ফলে হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর জায়গা হচ্ছে না। ৪০ থেকে ৫০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের খোলা চত্বরে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ওয়ার্ড, বারান্দা ছাপিয়ে অনেকের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতাল সামনের ওই চত্বরে। রোগীরা সেই চত্বরে গাছতলায় পাটি বা চাটাই বিছিয়ে থাকছে। গাছের সঙ্গে স্যালাইন টাঙিয়ে তা রোগীর শরীরে দেওয়া হচ্ছে।

গত সোমবার হাসপাতালে মোট ডায়রিয়া রোগী ছিল ১৭৩ জন। এর মধ্যে ১৪০ জন নারী ও শিশু। ডায়রিয়াসহ মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬৮। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ওয়ার্ড ১৮ শয্যার। কিন্তু রোগী ১৪০ জন। বাধ্য হয়ে বাইরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এত রোগী সামাল দেওয়ার মতো চিকিৎসক-নার্সও সেখানে নেই। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, তিন মাস ধরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কেউ নেই। চিকিৎসা কর্মকর্তাও পর্যাপ্ত নয়। নার্সের সংকট আছে। ওষুধের সংকটও রয়েছে। কারণ, হাসপাতালটি বন্যায় ডুবে গিয়ে কিছু ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে রোগীদের কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

ফেনীসহ বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন চিকিৎসাব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে জনবল–সংকট দ্রুততম সময়ের মধ্যে দূর করা হোক। শুধু ডায়রিয়াই নয়, অন্যান্য রোগীর চিকিৎসার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত কবলিত এলাকাগুলোতে রোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে ফিল্ড হাসপাতাল খোলা। এর ফলে জেলা–উপজেলার হাসপাতালগুলোর ওপর আলাদা চাপও তৈরি হবে না। তবে যা–ই করা হোক, কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।