বৃষ্টি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঝরনাগুলোকে নিয়ে স্থানীয় পর্যটকদের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। এ সময় অসতর্কতা, অবহেলাসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত ঝরনাগুলোতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। গত দেড় মাসে অন্তত ছয়জন মারা গেছেন, যা খুবই দুঃখজনক।
দেশের পর্যটন খাতে সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার ঝরনাগুলো বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। একেকটি ঝরনাকে ঘিরে গড়ে ওঠে একেকটি পর্যটনকেন্দ্র। এর ফলে বিপুল লোকের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু সেসব ঝরনাকে ঘিরে নিরাপত্তাসহ পর্যটকদের সচেতনতার বৃদ্ধির বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থেকে যায়।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকাগুলো খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া ও রূপসী ঝরনায় বেশি যান পর্যটকেরা। শুধু চট্টগ্রামের আশপাশ থেকে নয়, ঢাকাসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা সেসব ঝরনায় ছুটে যান। ঝরনাকে ঘিরে এসব পর্যটনকেন্দ্র তদারকির জন্য দেওয়া হয়েছে ইজারা। ইজারাদারের দাবি, পর্যটকদের অসাবধানতা ও গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। তাঁরা গাইড নিতে উৎসাহিত করেন, কিন্তু অনেক পর্যটক তা নিতে আগ্রহী হন না। ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে উঠতে নিষেধ করা হয় মাইক দিয়ে, তা–ও অনেকে মানতে চান না। দুর্ঘটনায় পড়াদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসও ছুটে আসে, তাদের দিক থেকেও কোনো অবহেলা নেই।
প্রতিবছর ঝরনাগুলোতে একাধিক মৃত্যুর জন্য কি শুধু পর্যটকদের গাফিলতি ও অসাবধানতা দায়ী, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, ইজারাদার কর্তৃপক্ষের আর কী করণীয় আছে, তা–ও অনুসন্ধান করা দরকার। দেখা গেছে যে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বৃষ্টির মৌসুমে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী অতি বৃষ্টিপাতের সময় ঝরনাগুলোতে পর্যটকদের পদচারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। সে তথ্য পর্যটকদের কাছে পৌঁছাতে সংবাদমাধ্যমেও প্রচার করতে হবে।
কোথাও ঘুরতে গেলে সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখা নিয়ে এ দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। সেটি একেবারে তরুণ থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে সত্য। দুর্ঘটনা ঘটে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান না অনেকে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত উদ্যোগই নিক না কেন, পর্যটকের ভাবনায় নিজের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে হবে। আর দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো আরও সচেষ্ট হবে, সেটিই কাম্য।