যেকোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখুন

সম্পাদকীয়

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে যে অনড় অবস্থানে আছে, তা নয়; কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দল বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়ে আছে। ১৯ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিরোধী দল বিএনপি ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয়।

স্থান হিসেবে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনে দলীয় অফিসের সামনের কথা বলেছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রথমে ২৪ জুলাই তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচি নিলেও পরে পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই নিয়ে যায়। তারা স্থান ঠিক করেছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট।

যেখানে ঢাকা শহরে একটি বড় রাজনৈতিক দল সমাবেশ ডাকলেই নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবযাত্রা ব্যাহত হয়, যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়, সেখানে দুই দল কর্মসূচি নিলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। নিত্য যানজটের এই শহরে গত সপ্তাহে তিন দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ রকম কর্মসূচি পালন করেছে। এতে নগরবাসী সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন, ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

আজকের (২৭ জুলাই) কর্মসূচি নিয়ে ঢাকার বাসিন্দারা তো বটেই, সারা দেশের মানুষই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। কেননা দুই পক্ষই সারা দেশ থেকে ঢাকায় লোকসমাগম করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, একই দিনে দুই দলের কর্মসূচিকে ঘিরে কোনো সংঘাত হবে না তো?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংঘাত হবে না, তাঁরা সতর্ক থাকবেন, যাতে বিএনপি কর্মসূচির নামে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না ঘটাতে পারে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকেই সংঘাতের আশঙ্কা করছেন।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সভা-সমাবেশ করার অধিকার সব দল বা সংগঠনের আছে। তাই বলে সমাবেশের নামে তারা এমন কিছু করতে পারে না, যাতে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই ঢাকায় ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই’ অবস্থা। বাইরে থেকে লাখ লাখ মানুষ এলে পথেও সংঘাতের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এসব সমাবেশের উদ্দেশ্য যদি হয় নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখানো, তাহলে তাদের জনগণের মনের ভাষাটা পাঠ করা উচিত। জনগণ একই দিনে দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখতে চায় না।

ডিএমপি জনজীবনের ভোগান্তির কথা ভেবে কোনো দলকেই প্রার্থিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। তারা বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠ ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠ অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছে।

এক দিনে দুই দলের সমাবেশ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিএনপি এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টা হিসাবে ওই দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সমাবেশ করা কোনোভাবেই উচিত হবে না।

ডিজিটাল বাংলাদেশের পর সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। অথচ তারা রাজনীতিটা চালাচ্ছে সেকেলে পদ্ধতিতে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণকে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি–পরিকল্পনা জানাতে ঘন ঘন রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ করার প্রয়োজন নেই। তারা রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ব্যবহার করতে পারে।

আমরা আশা করব, যে দল বা সংগঠন যেখানেই সমাবেশ করুক না কেন, সংঘাত এড়িয়ে চলবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে, কিন্তু তাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি অফিসের সামনে জলকামানসহ শতাধিক পুলিশ সদস্যের অবস্থান একধরনের রণপ্রস্তুতিরই আভাস দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণে জনমনে যেন এই ধারণা না হয় যে তারা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করছে।