আখাউড়া প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক

নদী–খাল–বিলের শ্রেণি পরিবর্তন করে দেশজুড়ে একের পর এক দখলবাজির চিত্র আমরা দেখছি। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সেগুলোকে পুকুর বানিয়ে ইজারা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ যদি হয় বাস্তবতা, স্থানীয় প্রভাবশালীরা কেন বসে থাকবে? যে যেভাবে পারছে, যুক্ত হয়ে পড়ছে নদী–খাল দখলবাজির সঙ্গে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর মৌজায়। সেখানে স্থানীয় দুজন প্রভাবশালীর কারণে গোটা একটি খালই অস্তিত্ব হারিয়েছে। এর ফলে শত শত বিঘা জমির পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভুক্তভোগী কৃষকেরা ওই প্রভাবশালীদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ক্ষমতাচর্চা এভাবেই বিষিয়ে তুলছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোকে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের স্থানীয় দুই প্রভাবশালী মো. তাহের মিয়া ও মো. রাসেল মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে কিছু জমি কেনেন। এরপর তাঁরা দুজন মিলে হাওড়া নদী থেকে তিতাস নদে মিলিত হওয়া খালের এক পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এতে খালটি অস্তিত্ব হারিয়েছে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ওই বেড়িবাঁধের কারণে সেখানকার জমিগুলোয় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৫০০ বিঘা কৃষিজমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালীরা তাঁদের কথা শুনছেন না। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সাত কৃষক। 

কৃষকের কাছে জমিই হচ্ছে মূলধন। তিনি শুধু নিজের জন্য ফসল ফলান না, অন্যের জন্যও জোগান অন্ন। জমির প্রতি কৃষকের অসীম মায়া। এ মাটির টান অনন্য। ফসলের প্রতি এ প্রেম অতুলনীয়। সেই জমিতে ফসল ফলানো যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তখন কৃষকের প্রতি সবচেয়ে অনাচার আর কী হতে পারে। এই অনাচার থেকে রেহাই পেতে মোগড়ার কৃষকেরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না তাঁরা। যার ফলে একজন কৃষক এভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন, ‘বিষ দিন, না হলে জমি থেকে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিন।’

আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং খালটি দ্রুত অবমুক্ত করে কৃষকদের জমি পানিনিষ্কাশনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।