জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১০০ দিন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। অন্যান্য কাজের মধ্যে গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি তাদের অগ্রাধিকার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এত দিনেও তারা নিহত ও আহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। এর ফলে সহায়তা ও পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে, ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে ১৮ হাজারের বেশি আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণ–অভ্যুত্থানে ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী, নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা রয়েছে। বলা হয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়ও সরকার বহন করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষপ নেওয়া হয়নি।
সরকারের অবহেলার প্রতিবাদে গত বুধবার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ঘেরাও করেও যখন প্রতিকার পাননি, তখন তাঁরা হাসপাতাল ছেড়ে রাজপথে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আহত ব্যক্তিরা রাত ১০টার মধ্যে উপদেষ্টাদের তাঁদের অবস্থানস্থলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোনো উপদেষ্টা সেখানে যাননি। এই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধি হাসপাতালস্থলে গিয়ে আহতদের বোঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে মধ্যরাতে সরকারের চারজন উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে যান এবং নিজেদের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। সে সময়ও আহত ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁদের কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ হাত–পা হারিয়েছেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি আহতদের ক্ষোভের কারণ, তিনি হাসপাতালের পঞ্চম তলায় গেলেও অন্যান্য তলায় অবস্থানরত ব্যক্তিদের দেখতে যাননি।
আহত ব্যক্তিরা যে উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেই দাবি অন্যায্য নয়। তাঁদের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে গিয়েও তাঁরা সাক্ষাৎ পাননি তাঁর।
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে প্রচার করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পদক্ষেপে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পদে এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শুরু থেকেই তাঁর কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান নয়। তিনি এর আগেও একটি কর্মসূচিতে গিয়ে চিকিৎসকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। বুধবার জুলাই আন্দোলনে আহতদের বিক্ষোভ থেকে রেহাই পেতে তাঁকে নিজের গাড়ি রেখে অন্য গাড়িতে হাসপাতাল ত্যাগ করতে হয়েছে। আহতদের এক লাখ টাকা করে যে সহায়তা দেওয়ার কথা, তা–ও অনেকে পাননি। এই অবহেলার জবাব কী।
আমরা আশা করব, সরকারের চার উপদেষ্টা আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে যে ওয়াদা করেছেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা এবং আহতরা কে কোন অবস্থায় আছেন, সেটাও দেশবাসীকে জানানো। প্রয়োজনে তাঁদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।