বাংলাদেশে এখন মাতৃমৃত্যু অপেক্ষা সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। দেশে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। মৃত্যু হয় ছয় থেকে সাত হাজার মানুষের। অথচ ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সাপের কামড়ে চিকিৎসা সহজলভ্য করা গেলে সিংহভাগ মৃত্যুই রোধ করা সম্ভব ছিল।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। বিষধর সাপ কামড়ালে তার চিকিৎসা হচ্ছে রোগীর শরীরে সময়মতো আন্টিভেনম প্রয়োগ করা।
সাপে কাটার অধিকাংশ ঘটনা গ্রামে ঘটলেও আন্টিভেনম থাকে দূরের জেলা সদরের হাসপাতালে। সাপে কাটা রোগীকে যখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে জেলা সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে অনেকটা সময় চলে যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই সেখানেও আন্টিভেনম পাওয়া যায় না এবং এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীরও ঘাটতি থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনদের ছুটতে হয় ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে কিংবা কাছের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছাতে এতটা দেরি হয়ে যায় যে শেষ পর্যন্ত সাপের কামড়ে আহত অনেককে বাঁচানো যায় না।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ও শুক্রবার রাতে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় বিষধর সাপের কামড়ে এক শিশু ও ৫০ বছর বয়স্ক এক ওঝার মৃত্যু হয়েছে। শিশুটিকে তার অভিভাবকেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বরিশাল-শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওঝার মৃত্যু হয়।
মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুরে সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কম সময়ের মধ্যে কাছাকাছি কোথাও চিকিৎসার সুযোগ না থাকার ব্যাপারটি সামনে চলে আসে। একজনকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়েছে, অন্যজনকে বরিশালে নিয়ে যেতে হয়েছে। পথের দূরত্বের কারণে চিকিৎসা শুরুর যে দেরি, সে জন্যই তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই চিত্র সারা দেশে প্রায় সবখানেই।
সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার প্রতি এমন বৈষম্য ও অবহেলার কারণ হলো, তারা প্রান্তিক ও গরিব জনগোষ্ঠী। প্রতিবছর যেখানে সাপের কামড়ে এত মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে নীতিনির্ধারকেরা কীভাবে বিষয়টি উপেক্ষা করে চলতে পারেন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। সাপে কামড়ানো রোগীদের মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু তারাও তো ঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না।
বিষধর সাপের কামড়ে আহত ব্যক্তিকে দেরিতে চিকিৎসা মানেই তাকে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। দেশে সব বিষধর সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম তৈরি এবং ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে তা মজুতের ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্যার আগেই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সাপের কামড়ে চিকিৎসাদানের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী বাহিনী গড়ে তোলা প্রয়োজন।