স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো কী করছে

সম্পাদকীয়

যেকোনো রোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো প্রাক্‌–প্রতিরোধব্যবস্থা ও আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর চিকিৎসা। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা চিকিৎসার কাজটি মোটামুটি করলেও প্রাক্‌–প্রতিরোধব্যবস্থাকে বরাবর অগ্রাহ্য করে গেছেন।

গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে আশা করা গিয়েছিল, কর্তৃপক্ষ সজাগ হবে এবং প্রাক্‌–প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর জোর দেবে। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কিছু দেখা যায়নি। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে শঙ্কা ও উদ্বেগ থেকেই গেছে।

গতকাল বুধবার প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ মাসের ১৭ দিনে ডেঙ্গুতে ৩০ জনের মৃত্যু হলো, যা চলতি বছর কোনো এক মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গত মাসে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১৩ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫১ জন পুরুষ ও ৬২ জন নারী। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ২১৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করলে এবার চট্টগ্রামের অবস্থা ঢাকার চেয়েও শোচনীয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ আক্রান্ত হন এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান।

মৃত্যুর সংখ্যা ধরলে এবারের পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে ভালো। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কি সংখ্যাটি আরও কমিয়ে আনতে পারতাম না? অবশ্যই পারতাম, যদি ডেঙ্গু প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত দুই মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার একযোগে কাজ করত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা তাদের কাজ নয়। কেউ আক্রান্ত হলে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। সেই কাজ তারা করছে।

তবে চিকিৎসাসেবাও ভালোভাবে হচ্ছে, সেটা বলা যাবে না। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। চিকিৎসক ও ওষুধপত্রের ঘাটতি আছে। আবার অনেকের সামর্থ্য নেই হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসার।

ডেঙ্গুর প্রাক্‌–প্রতিরোধের কাজটি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। ক্ষমতার পালাবদলের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে কাউন্সিলর ও সদস্যদের অপসারণ না করা হলেও বেশির ভাগ পলাতক।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হলেও এর কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না। বিশেষ করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে যে মশকনিধনের কথা, সেটা একেবারেই থমকে আছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে কীভাবে? মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আঞ্চলিক নেতা–কর্মীদের যুক্ত করা যেতে পারে। তবে উদ্যোগটা নিতে হবে সিটি করপোরেশনকেই।

এখনো বৃষ্টির মৌসুম পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বাড়িঘর ও আঙিনা এমনভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে সেখানে এডিস মশা জন্ম নিতে না পারে। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতাও জরুরি।

কয়েক বছর আগে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা মহামারি হানা দিয়েছিল। সেটি ছিল অজানা ধরনের রোগ। এরপরও বাংলাদেশ মোটামুটি সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রয়াস ছিল বলেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও সেই মানসিকতা নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।