চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কী করছে

সম্পাদকীয়

গ্রামগঞ্জে হাটবাজার আর শহর এলাকার কাঁচাবাজারের তফাত অনেক। দুটিই উন্মুক্ত জায়গায় হতে পারে, তবে গ্রামের ক্ষেত্রে বিষয়টি যত সহজ, শহরের ক্ষেত্রে ততটা নয়। শহরে কোনো কোনো কাঁচাবাজারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বা ভবন থাকলেও তা সড়ক, ফুটপাত বা অলিগলি পর্যন্ত চলে আসে। চট্টগ্রাম শহরের কাঁচাবাজারের ক্ষেত্রে এমনটি হরহামেশা দেখা যায়। এমনকি প্রায় ছয় কোটি টাকা খরচ করে ভবন তৈরি করেও কোনো লাভ হয়নি। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়।

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজারটি অনেক বছরের পুরোনো। কয়েক তলার জীর্ণ একটি ভবন ঘিরে আশপাশে আরও উন্মুক্ত জায়গা ও অলিগলিতে বসত এ কাঁচাবাজার। ফলে ওই এলাকায় সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকে, হাঁটাচলা পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে করা যায় না। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সেখানে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৬ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভবনটি উদ্বোধনও করা হয়। বাজারটি ওই ভবনে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও, তা আর হয়নি। নিচতলায় দোকান বসলেও দোতলা ও তিনতলা এখনো খালি পড়ে আছে।

ভবনের দুটি তলা খালি রেখে এখন পাশের সড়ক ও ফুটপাতজুড়েই বসছে বাজারের বড় অংশ। ভাসমান সেই বাজারই সবচেয়ে জমজমাট। সেই বাজারের কারণে দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরাও ভবনে যেতে আগ্রহী নন। কারণ, সেখানে দোকান চালু হলে তাঁদের বেচাবিক্রি হবে না। তাঁদের প্রশ্ন, মানুষ নিচ থেকে বাজার করে নিয়ে যেতে পারলে দোতলায় কেন উঠবেন? দোকান বিক্রি করে সিটি করপোরেশন বিপুল টাকা আয় করলেও বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দোকানিরা।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ভাসমান কাঁচাবাজারের দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন সিটি করপোরেশনের ইজারাদার। তার মানে, এই ভাসমান কাঁচাবাজার টিকিয়ে রাখার পেছনে সিটি করপোরেশনের পরোক্ষ ভূমিকাও রয়েছে। এখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

অবৈধভাবে এসব দোকান বসার কারণে সেখানকার কে বি আমান আলী সড়কের ধুনিরপুল ও ফুলতলা এলাকায় প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে। আবার দোকানগুলোর ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় বাজারসংলগ্ন চাক্তাই খালে। এতে অল্প সময়ে ভরাট হয়ে যায় খাল। ফলে বর্ষার সময় অল্প বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে আশপাশ এলাকা তলিয়ে যায়।

এই কাঁচাবাজারকে যেভাবেই হোক ভবনে স্থানান্তরিত করতে হবে। নয়তো ভবন নির্মাণে খরচ হওয়া বিপুল অর্থ অপচয়ই হবে শুধু। জলাবদ্ধতা, যানজট সমস্যার নিরসন ছাড়াও বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। এখন তারা কী করে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।