শ্রমিক নিরাপত্তা কবে নিশ্চিত হবে

চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা শিল্পের সাফল্যের বিষয়টিই আমরা বেশি শুনে থাকি। এ শিল্প থেকে আসে অন্য আরও শিল্পের কাঁচামাল। রিরোলিং মিলের কাঁচামাল ইস্পাত তার মধ্যে অন্যতম, যে কারণে দেশে বড় বড় রিরোলিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। শিল্পটির শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ নিয়ে শ্রমিক ও অধিকারকর্মীদের অভিযোগও খুব একটা আমলে নেওয়া হয় না।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন জাহাজভাঙা কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গত রোববার এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস)। সেখানে বলা হয়, জাহাজভাঙা শিল্পে গত ১০ বছরে ১২৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। কারখানাগুলোয় ১০০ জন ঠিকাদারের মধ্যে ৯৮ জনই অদক্ষ। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে ও অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ কারণে কারখানাগুলোয় দুর্ঘটনা কমছে না। অনিয়মকারী ঠিকাদারেরা শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতনও দেন না। শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। 

মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন তোলা হয়, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত না করে কীভাবে এসব কারখানা গ্রিন শিপইয়ার্ডের সনদ পায়? দুর্ঘটনার পর যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, সেখানে কোনো শ্রমিক প্রতিনিধি থাকেন না। ফলে ভুক্তভোগী শ্রমিকের পরিবারের কথা উঠে আসে না। আরও বলা হয়, সীতাকুণ্ডে অধিকাংশ কারখানা অলস পড়ে আছে। সরকারের উচিত ওই কারখানাগুলোকে সক্ষম মালিকের কাছে ইজারা দেওয়া। তাহলে হাজার হাজার শ্রমিক আর বেকার হতেন না। মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি গত পাঁচ বছরেও কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। 

মতবিনিময় সভাটিতে জাহাজভাঙা কারখানার মালিকদের কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, জাহাজভাঙা কারখানার মালিকদের সভায় অংশগ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। আমরা জানতে পারছি, জাহাজভাঙা কারখানার সমস্যা নিয়ে কোনো সভা–সেমিনারেই মালিকপক্ষের কেউ আসেন না। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনার পর সঠিক তথ্য দিতে চায় না মালিকপক্ষ। আবার দুর্ঘটনার তদন্ত করে কারণ জানা গেলে, সেটি সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ না করার জন্য মালিকপক্ষ চাপ প্রয়োগ করে।

বোঝাই যাচ্ছে মালিকপক্ষের অসহযোগিতাই এ শিল্পের বড় একটি সমস্যা। মুনাফাই গুরুত্বপূর্ণ, শ্রমিকদের জীবন নয়, শ্রমিকশোষণের সেই চিরায়ত বাস্তবতাই এখানে হাজির বলা যায়। এখন মালিকদের সহযোগিতা ছাড়া কীভাবে এ শিল্পের উন্নতি সম্ভব?

সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত। আমরা আশা করব, এ কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জাহাজভাঙা শিল্পের সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা—দুটি দিক বিবেচনা করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।