ঈদের আগে দুই দিনে বজ্রপাতে ১১ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। নেত্রকোনার দুর্গাপুরের যে কৃষক ছোট ভাইকে নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন ধান কাটতে, তিনি ফিরে এলেন লাশ হয়েছে। বজ্রপাতে আহত হন তাঁর ভাইও। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের যে কৃষকেরা গরু আনতে মাঠে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও দুজন বজ্রপাতের শিকার হলেন।
সিলেটের জৈন্তাপুরে দুটি শিশু আম কুড়ানোর সময় বজ্রপাতের মারা গেছে। প্রতিবছর এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। আবার এই সময়ে কৃষকেরা জমি চাষ, ধান কাটা, গরু চরানোর কাজে বেশি সময় মাঠে থাকেন। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুনে হয় ৭০ শতাংশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৭২ শতাংশ কৃষক।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তিন ধরনের বজ্রপাত হয়। এক মেঘ থেকে আরেকটি মেঘে বা আন্তমেঘ, একই মেঘের এক স্থান থেকে আরেক স্থান বা আন্তমেঘ এবং মেঘ থেকে ভূমিতে।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে আসার আগের দুই মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বজ্রপাতের প্রকোপ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি হয়। বর্ষাকালে রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বজ্রপাত সংঘটনের দিক থেকে প্রথম তিনটি জেলা। শীতকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বেশি বজ্রপাত হয়।
সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করলেও এর নিয়ন্ত্রণ কিংবা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যদিও ১০ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথাও শোনা গিয়েছিল।
উন্নত দেশগুলো বজ্রনিরোধক খুঁটি বা পোল স্থাপন করে, মানুষকে সচেতন করার মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশেও বজ্রনিরোধক খুঁটি ও আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র বসিয়ে এটা সম্ভব। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগাম সতর্কীকরণযন্ত্র বসানো হয়েছে।
এ ছাড়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমেও বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়। যেমন বজ্রপাতের ঘরের ভেতরে ফোন, কম্পিউটার ও অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা, জানালা, দরজা বা যেকোনো প্রবেশদ্বার থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের সময় দেয়ালে হেলান না দেওয়া।
ঘরের বাইরে ঝুঁকি এড়াতে উঁচু স্থান এড়িয়ে চলা, নদী, পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা, কোনো বড় গাছের নিচে না দাঁড়ানো। বৈদ্যুতিক তারের বেড়া, ধাতব পদার্থ বা সংশ্লিষ্ট বস্তু (টাওয়ার) থেকেও দূরে থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের যেমন টেকসই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন, তেমনই গণসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।