ধরলা ও সিঙ্গিমারী বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি আন্তসীমান্ত নদী। লালমনিরহাট দিয়ে এ দুটি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখানেই নদী দুটির সর্বনাশ করছে একটি চক্র। অবৈধভাবে বালু ও পাথর তুলে নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশ করা হচ্ছে। এ ঘটনা নতুন নয়।
তবে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে ছয় বছর ধরে এসব অপকর্ম বন্ধ ছিল। কিন্তু চক্রটি নতুন কৌশলে ফিরে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় থানার যোগসাজশেই সেটি সম্ভব হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খুবই গুরুতর।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাটগ্রামে এখন দুই শতাধিক বোমা মেশিনে রাতভর উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ও পাথর। আগে দিনরাত পাথর উত্তোলন চললেও এখন সেটি শুধু রাতের কারবার।
রাতে দুর্গম স্থানে প্রশাসনের লোকজন পৌঁছানোর আগে চক্রটি নদীতে পাইপ ফেলে দিয়ে নৌকায় পাম্প ও যন্ত্রপাতি নিয়ে সটকে পড়ছে। এতে তাদের যন্ত্র রক্ষা পাচ্ছে। চক্রটিকে ধরা এবং যন্ত্রপাতি জব্দ করে ধ্বংস করতে না পারলে এই অপকর্ম কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। এখন সেখানে যেহেতু পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, চক্রটির বিরুদ্ধে আদৌ কি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে?
এখানে বোমা মেশিন নামে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আরও ভয়াবহ। বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ হয় বলে এটির এমন নাম। উচ্চ আদালত বোমা মেশিন নামের যন্ত্রের ব্যবহারের ওপর ২০০৯ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তখন থেকে উপজেলা প্রশাসন নিষিদ্ধ এ যন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এরপরও উপজেলাটিতে বোমা মেশিনের ব্যবহার থেকেই যাচ্ছে।
বোমা মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে ১০০–২০০ ফুট গভীর থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দুই শতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে যদি সে কাজটি করা হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভূগর্ভের মাটির স্তর পরিবর্তনের চরম আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে সেখানে। গত জুনের শেষে অভিযান চালিয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, ছয়টি বোমা মেশিন ধ্বংস ও দেড় লাখ টাকার মতো জরিমানা করা হয়েছে। সেখানে পরিবেশবিধ্বংসী যে কর্মকাণ্ড চলছে, তাতে এমন শাস্তি কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।
দুই শতাধিক বোমা মেশিনের মধ্যে মাত্র ছয়টি ধ্বংস করা অনেকটা লোকদেখানোর মতোই ব্যাপার হবে। বালু ও মাটি তোলার সময় উপস্থিত থাকা ব্যক্তি ছাড়াও চক্রটির পৃষ্ঠপোষক ও মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।