ঈদের আগে খাদিজাকে মুক্তি দেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) দুই মামলায় আটক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে মুক্তির দাবিতে গত শনিবার বাহাদুর শাহ পার্কে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে কয়েকটি সংগঠন।

খাদিজার মুক্তির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কঠোর সমালোচনা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মাস ধরে বন্দী থাকবেন আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে, সভ্য দুনিয়ায় এটা চলতে পারে না।

অন্যদিকে ৩০টি প্রতিবাদী সংগঠন খাদিজার মুক্তির দাবিতে যুক্ত বিবৃতি দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্র কোনোভাবে নিবর্তনমূলক আইনের প্রয়োগ করে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দিতে পারে না।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সংগঠন তাঁর মুক্তি চেয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খাদিজাকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। খাদিজার পরিবারও তাঁকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা চোখে ঠুলি ও কানে তুলা দিয়ে বসে আছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা অনলাইনে একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে বিদেশে অবস্থানরত এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়ে খাদিজা ও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানার পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে। গত পাঁচ মাসে এই আইনে আরও কয়েক শ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

সাংবাদিক সমাজ শুরু থেকে এই আইনকে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে দেখে আসছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে বহু মানবাধিকার সংগঠন আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ রোধ করার নামে এ আইন করা হলেও এটি রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে হরদম ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন, আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে। আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সেই অপব্যবহারের মাত্রা যে কত ভয়ংকর, খাদিজার মামলাই তার প্রমাণ। কেবল সরকারবিরোধী প্রচারণা ও কটূক্তির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে মাসের পর মাস কারাগারে আটক রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই।

আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শিগগিরই সংশোধন করা হবে। আমরা মনে করি সংশোধন নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। এই আইনে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা কেউ দুর্ধর্ষ অপরাধী নন।

তাঁরা রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিও নন। তাহলে কেন তাঁদের মাসের পর মাস আটক রাখা হবে? বিচারের আগেই কেন তাঁদের ‘শাস্তি’ ভোগ করতে হবে?

আর যত দিন এই আইন প্রত্যাহার না করা হচ্ছে, তত দিন এর যথেচ্ছ অপব্যবহার চলতে থাকবে, এটা চলতে পারে না। ঈদের আগে খাদিজাসহ এ আইনে অন্যায়ভাবে আটক সব বন্দীকে মুক্তি দিয়ে সরকার ন্যূনতম সদিচ্ছা দেখাতে পারে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।