জলাবদ্ধতা এখন আর বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়। অনেক জেলা–উপজেলা শহরেও তীব্র আকার ধারণ করেছে এ সমস্যা। শহর পেরিয়ে গ্রামগুলোও তাতে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্ষাকাল বা বৃষ্টির মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে দেখা যাচ্ছে মানুষকে। মূলত নদ–নদী ও খাল ভরে যাওয়া এবং পানিনিষ্কাশনের পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যার কারণে যশোরের কেশবপুরের ১০৪টি গ্রাম তিন মাস ধরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
শহর এলাকার জলাবদ্ধতা বেশি সময় স্থায়ী হয় না। কয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে যায়। এরপরও মানুষের ভোগান্তি বা দুর্ভোগ চরমে ওঠে। কিন্তু দিনের পর দিন, এমনকি কয়েক মাস ধরে যদি পানি আটকে থাকে, তাতে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর এমন পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। পানি নামার পথ না থাকায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানি আটকে ছিল দীর্ঘদিন। কেশবপুরের ক্ষেত্রে সেটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
কেশবপুরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এতে গত সেপ্টেম্বের মাঝামাঝি সময় থেকে কেশবপুর পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১০৪ গ্রামে এখন পানি জমে আছে। এতে এসব গ্রামের ৯ হাজার ৮৩০টি পরিবারের ৩৯ হাজার ৩২০ সদস্য এখন পানিবন্দী। সব বাড়ির আশপাশে, এমনকি ঘরের মধ্যেও পানি। পানির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। দূষিত পানিতে কয়েক শ গাছ মারা গেছে। পচা পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করায় লোকজন চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ বাড়ি ছেড়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে শতাধিক পরিবার খুপরি তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। ভুক্তভোগী মানুষ কোনো সহযোগিতা চান না। তাঁদের দাবি একটাই, দ্রুত জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা দূর করতে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে পলি অপসারণের কাজ চলছে।
গত বছরেও কেশবপুরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। তবে এতটা প্রকট ছিল না। তখনই দাবি উঠেছিল নদী খননের। এবার সমস্যা প্রকট হওয়ার পরও কার্যকরভাবে নদী খনন করা হচ্ছে না; বরং কিছু জায়গায় পলি সরিয়ে পানি নামার চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এসব চ্যানেল পানি নামার জন্য যথেষ্ট নয়। এখন কি কেশবপুরের মানুষ এভাবে ভুগতে থাকবেন?