কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতির পর দেশের নানা জায়গায় ও ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আন্দোলন অব্যাহত আছে। আন্দোলন ও বিক্ষোভ দমনে সরকার ইন্টারনেট সংযোগের ওপর খড়্গহস্ত হচ্ছে। সরকার সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখে টানা ১০ দিন। দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে খুলে দেওয়ার এক দিন পর গতকাল শুক্রবার আবার ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শুক্রবার দেশজুড়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ–প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রাম বন্ধ হয়ে যায়। তবে মোবাইল ইন্টারনেটে পাঁচ ঘণ্টা পর ফেসবুক-মেসেঞ্জার আবার চালু করা হয়। সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ও ধীরগতি করে দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রথম আলো বারবার সম্পাদকীয় লিখেছে। আমরা বলে এসেছি, এমন সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ও অগণতান্ত্রিক। এভাবে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখা মানুষের বাক্স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপও।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এভাবে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখা গোটা বিশ্বে একটি নজির হয়ে থাকবে। অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনার অজুহাত দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কথা বললেও মানুষের কাছে এটি প্রতীয়মান হয়েছে, সরকার নিজেই ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিল। অন্যদিকে কোন যুক্তিতে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলো, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতেও পারেনি।
এ ছাড়া আমরা দেখেছি ফেসবুক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের অন্য ব্যক্তিরা এমনকি সরকারদলীয় নানা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ থেকে একের পর এক পোস্ট দেওয়া হয়েছে। মানুষকে ফেসবুক ব্যবহারে বাধা দিয়ে নিজেরাই সেটি ব্যবহারে সচেষ্ট থেকেছেন, এর চেয়ে নিন্দনীয় আর কী হতে পারে।
সরকারকে বুঝতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বারবার বাধা আরোপ করে গুজব থামানো সম্ভব নয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পেজ বা ফ্যাক্ট চেকারদের থেকে সঠিক তথ্যটি জানতে মানুষের সুবিধা হয়। কেউ মিথ্যা তথ্য ছড়ালে আরও মানুষ প্রমাণসহ সেটি ধরিয়ে দেয়। ফলে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা আরোপ করা থেকে সরে আসা উচিত সরকারের। আমরা আর ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের ঘটনা দেখতে চাই না।