দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার অন্যতম শিকার নদ-নদী ও খাল। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকদের মিলেমিশে ভাগজোখ করার ঘটনা আমরা দেখতে পাই। যেমন বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর বালু লুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই জায়গায় বড় মিল দেখা যাচ্ছে। ফলে বালু লুটের ব্যবসা সেখানে চরমভাবে গেড়ে বসেছে। যমুনা নদীর যে সর্বনাশ ঘটছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৬ বছর বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর বালু লুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বৈধ বালুমহাল থেকে বালু তোলার পাশাপাশি আইন লঙ্ঘন করে তাঁরা ইজারা এলাকার বাইরে থেকে বালু তোলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরেও তাঁদের বালু লুটের ব্যবসা টিকে আছে। বরং সেই লুটপাটে ভাগ বসিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতারা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অবৈধ বালু উত্তোলনের সাম্রাজ্য সমঝোতার ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে দুই দলের মধ্যে আদর্শিক বিভেদ থাকলেও বালু লুটপাটে তাঁরা এখন মিলেমিশে একাকার।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালু তোলা হয়ে থাকে। এ ইজারা আবার যে-সে পায় না—তার লাগে ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই ক্ষমতা ও প্রভাবের বলে বালুমহালের বাইরে থেকেও অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। গড়ে তোলা হয় বালু লুটপাটের বিশাল সাম্রাজ্য। এভাবেই দেশের অনেক নদ-নদী ও সংলগ্ন এলাকার ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনা হয়েছে। ধুনটে এখন শহড়াবাড়ি, শিমুলবাড়ি, পুকুরিয়া, ভূতবাড়ি ও ভান্ডারবাড়ি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
ইজারা এলাকার বাইরে বালু তোলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ৫ তারিখের পর অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীসহ এলাকায় গিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের সতর্ক করে এসেছেন তিনি। এরপরও অব্যাহত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাউবোর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, স্পার, বাঁধ বা অন্য যেকোনো স্থাপনা হুমকিতে ফেলে কেউ বালু তুললে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয় পাউবো। সরেজমিন পরিদর্শনের পর স্থাপনা হুমকিতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে বালু উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসনের এমন নজরদারি অব্যাহত থাকবে। ইজারা দেওয়া বালুমহালের বাইরের এলাকা থেকে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। সেটি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। বালু লুটেরাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না।