উপকূলীয় মানুষের জানমাল রক্ষায় বাঁধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার যথাযথ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভূমিকাকে কোনোভাবেই যথার্থ বলার কোনো সুযোগ নেই। মে মাসে প্রকাশিত পত্রিকান্তরের খবরে জানা যাচ্ছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা—এই তিন উপকূলীয় জেলার ২ হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের জরাজীর্ণ বাঁধ যে কতটা সর্বনাশের কারণ হতে পারে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনাটি তার দৃষ্টান্ত।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েক দিন বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি আরও সঙিন হয়ে ওঠে রোববার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর রিংবাঁধের ২৫-৩০ মিটার ধসে পড়লে। ভেঙে পড়া বাঁধের কারণে ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর ও আমন ধানের খেত। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি কাঁচা ঘর। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের প্রাথমিকভাবে ঘের ও পুকুরের মাছ, স্লুইসগেটসহ সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানুষের সম্পদের এই অসামান্য ক্ষতি কি অনিবার্য ছিল? এখানে দায়টা ষোলো আনা পাউবোরই। স্লুইসগেট করতে গিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। স্লুইসগেটের বদলে সেখানে রিংবাঁধ বানায় পাউবো।
বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও তদারকিতে পাউবোর গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনেক পুরোনো। পাউবোর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপকূলের বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ তারা নেয় সাধারণত বর্ষার আগে। ফলে সেই বাঁধ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা নিম্নচাপের ফলে বাড়তি বৃষ্টির চাপ সহ্য করতে পারে না। বেতনা নদীর রিংবাঁধের অংশবিশেষ কেন ভেঙে পড়ল, তাতে পাউবোর অনিয়ম ও গাফিলতি কতটা—সেটা অবশ্যই তদন্ত করে বের করতে হবে। পাউবোকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে মানুষের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটল এমন এক সময়ে, যখন দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ায় এখানকার মানুষের পুনর্বাসন ও অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনা বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। সে সময় সাতক্ষীরার বাঁধ ভেঙে তৈরি হওয়া প্লাবন নিশ্চিত করেই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।