ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আমলে নিন

সম্পাদকীয়

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা–বাণিজ্যই কেবল হুমকিতে পড়ে না, বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা যায়।

গত মঙ্গলবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের নেতারা শিল্পকারখানার নিরাপত্তা দিতে এবং এই খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের বিদেশি ক্রেতাদের এখন মূল উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরাজমান অন্যান্য জটিলতা নিরসনেও শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে বিদেশি ক্রেতারা বিকল্প গন্তব্য খুঁজবেন।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও আর্থিক খাতে নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছি। তাঁদের বলেছি, বাংলাদেশে একটি নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। কারখানার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আমরা দেব।’ উপদেষ্টার এই আশ্বাসে ব্যবসায়ীরা তখনই আশ্বস্ত হবেন, যখন তাঁরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা–বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা চালাতে পারবেন। আইসিসির নেতারা ব্যাংক, এনবিআর ও জ্বালানি খাতের সংস্কার; তথ্যপ্রযুক্তি খাত শক্তিশালীকরণ; বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি; তথ্য-উপাত্তে স্বচ্ছতা; বাণিজ্য সংগঠনের সংস্কারসহ ১৩ দফা প্রস্তাবও দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টার কাছে।

৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ কিছু বেসরকারি শিল্পকারখানায় হামলা, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো ব্যবসায়ী অপরাধ করে থাকলে আইনানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই বলে শিল্পকারখানায় হামলা ও লুটপাট চলতে পারে না। যেদিন ব্যবসায়ী নেতারা অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন, তার দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার্সে দ্বিতীয় দফা আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গোলাম দস্তগীরের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শত শত মানুষ সেখানে কারখানাটিতে লুটপাট করে। অন্যদিকে লুটপাট চলাকালে আরেকটি দল এসে আগুন দেয়। ফলে অগ্নিদগ্ধ ভবনে শতাধিক মানুষ আটকা পড়েছিলেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের মতে, লুটপাট ও আগুনে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই কারখানায় যে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন, তঁাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কারখানাটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে কতজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন, কতজন আহত হয়েছেন, উদ্ধার অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। শিল্পাঞ্চলে থানা–পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ আছে শিল্পকারখানার নিরাপত্তার জন্য। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, লুটপাটের জন্যই কারখানায় হামলা করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাহলে তাদের কাজ কী?

কেবল রূপগঞ্জ নয়, আরও বেশ কিছু স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। আবার অনেক স্থানে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো দেশের শিল্পকারখানা ও ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত হুমকি বলে মনে করি।

এসব অঘটন কি শুধুই লুটপাটের জন্য নাকি এর পেছনে কোনো ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে, সেটাও খুঁজে বের করা দরকার। লুটেরা ও অগ্নিসংযোগকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে সব কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সরকারেরই দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।