আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন

সম্পাদকীয়

কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের ওপর, দেশের মানুষের ওপর কী ঘটেছে, তার প্রত্যক্ষদর্শী আমরা সবাই। দেশের ইতিহাসের কোনো একক আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির সাক্ষী হতে হলো দেশবাসীকে। সরকার ও সরকারি দলের প্রতি আমাদের বারবার আহ্বান ছিল, জনগণের ভাষা বুঝুন। দুঃখজনক হচ্ছে, তারা তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। দিন শেষে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো। ছাত্র–জনতাও তাঁদের বিজয় নিশ্চিত করলেন। কিন্তু এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির ঘটনাও ঘটেছে, যা দুঃখজনক এবং কোনোভাবে কাম্য নয়।

দেশজুড়ে সৃষ্টি হওয়া গণজোয়ারের মধ্যে দেখা গেছে, একশ্রেণির লোক বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণহীন ও সুযোগসন্ধানী। ক্ষোভ মেটাতে গতকাল বিকেল থেকে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, মন্ত্রী–এমপিসহ সরকারি দলের অনেক নেতার ঘরবাড়ি, স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একশ্রেণির বিক্ষুব্ধ মানুষ গণভবন ও জাতীয় সংসদের ভেতরে ঢুকেও বিশৃঙ্খলা চালিয়েছে। যে যা কিছু পারে, সেখান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হচ্ছে, কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরও আক্রান্ত হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কয়েক দিন ধরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকেও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয় রক্ষার ব্যাপারে বারবার সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম, উত্তেজিত বা সুযোগসন্ধানীরা এমন ঘৃণিত ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডেই লিপ্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান খুব একটা দেখা যায়নি। অদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা হয়তো সামনে থাকতে নিরাপদবোধও করেনি। রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তরেও হামলা হয়েছে। তবে জনগণের জানমাল রক্ষায় দ্রুত তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের দ্রুত তৎপর হতে হবে। গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনায় যেসব অস্ত্রধারী সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা গতকাল বিকেলে এক বার্তায় বলেছেন, আমরা সবাইকে শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করছি। যাঁরা ঢাকায় আসতে পারছেন না, তাঁরা নিজ নিজ এলাকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিন। রাজপথে অবস্থান নেওয়া ছাত্র–জনতার উদ্দেশে লুটপাটকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক পথে চলার পর নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশ। একে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। পুরোনো বিভাজন, বিভক্তি, দলীয় রেষারেষি জিইয়ে থাকলে বা রাখলে আবারও আমাদের হোঁচট খেতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আগে সবার জানমাল সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আর কোনো সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চাই না।