কংক্রিট, যানজট আর নানা দূষণের কারণে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এই ‘যান্ত্রিক’ নগরীতে যতটুকু গাছপালা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনপরিসর থাকার কথা, তা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনের প্রবেশ ফি অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হলো। ফলে নাগরিকদের জন্য আরও বেশি সংকুচিত হয়ে গেল এ দুটি জনপরিসর, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন অনুসারে এ দুটি উদ্যানের প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে, প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেমন বোটানিক্যাল গার্ডেনে আগে প্রবেশ ফি ছিল জনপ্রতি ২০ টাকা, তা এখন ১০০ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চার জন্য যাঁরা উদ্যানে হাঁটতে যান, তাঁদেরকে এখন ৫০০ টাকা দিয়ে বার্ষিক কার্ড করতে হবে, তা–ও অবস্থান করা যাবে মাত্র এক ঘণ্টা। অথচ শরীরচর্চার জন্য আগে উদ্যানে কোনো রকম ফি লাগত না। বিদেশি পর্যটকদের জন্যও আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমনিতে নাগরিকদের অবসর কাটানো ও প্রকৃতির মাঝে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানেও অধিক হারে ফি বসানোর বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নাগরিক সমাজের বক্তব্য, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেনের মতো জনপরিসরে কোনোভাবেই ফি থাকা উচিত নয়। তারপরও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সামান্য ফি থাকলে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি ছিল না। কিন্তু এত অধিক হারে ফি বাড়ানোকেও অযৌক্তিক মনে করছেন নগর–পরিকল্পনাবিদেরা। এতে সাধারণ মানুষ উদ্যান দুটিতে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ইতিমধ্যে সেটিই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে সেখান থেকে ফিরে আসছেন।
মানুষ পার্ক বা উদ্যানে যাওয়া কমিয়ে দিলে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়বে। এতে তাঁদের মধ্যে মানবিক বোধশূন্যতা তৈরি হতে পারে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। তাঁর মতে, প্রবেশ ফি এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি। আর এটাকে বাণিজ্যিকভাবে দেখাও উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।
আমরা তাঁর এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। শুধু বোটানিক্যাল গার্ডেন নয়, অন্যান্য পার্ক ও উদ্যানের বিষয়েও সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।