সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর শিকার ও চোরাচালান নতুন কিছু নয়। জেল বা জরিমানা—যতই ব্যবস্থা নেওয়া হোক না কেন, শিকারিদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তিন জেলাজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনে অনেকগুলো শিকারি চক্র তো আছে, এর সঙ্গে যুক্ত আছে চোরাচালানকারী চক্রও। দেখা যাচ্ছে, অনেক ঘটনায় শিকারি দলকে ধরা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আসলে গোটা চোরাচালান চক্রও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে কীভাবে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী শিকার ও পাচার বন্ধ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সুন্দরবন–সংলগ্ন এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখান থেকে নদী পার হলেই গহিন জঙ্গলে ঢুকে যাওয়া যায়। পেশাদার হরিণ শিকারিরা গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে নাইলনের দড়ির একধরনের ফাঁদ হরিণের নিয়মিত যাতায়াতের পথে পেতে রাখেন। চলাচলের সময় হরিণগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। তারপর বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়। এমন একটি গ্রাম হচ্ছে কয়রা উপজেলার সরদার পাড়া। সেখান থেকে গত শনিবার অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের চারটি পাসহ ছয় কেজি মাংস উদ্ধার করেছেন কোস্টগার্ড সদস্য ও বনরক্ষীরা।
সুন্দরবনে এমন অভিযান নিয়মিত–অনিয়মিতভাবে চালানো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিকারিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। শনিবারের অভিযানের ক্ষেত্রেও সেটি দেখা যায়। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা বলছেন, এ ঘটনায় কয়রার একটি আদালতে বন্য প্রাণী নিধন আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আমরা আশা করব, তাঁরা দ্রুত শিকারি দলকে ধরতে পারবেন। তবে শুধু শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কি সুন্দরবনে বন্য প্রাণী শিকার বন্ধ করা সম্ভব? পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, গোটা সিন্ডিকেটের একদল থাকে সুন্দরবনের ভেতরে, আরেক দল পরিবহন ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। চড়া দামে হরিণের মাংস বিক্রির জন্য ক্রেতাদের কাছে জীবন্ত হরিণ নিয়ে তাঁদের সামনেই জবাই করা হচ্ছে—এমন ঘটনাও ঘটছে। আবার বনের মধ্যে জবাই করা হরিণের ছবি-ভিডিও অনলাইনে পাঠানো হচ্ছে বাইরের ক্রেতাদের কাছে। যে কারণে অনেকের কাছে হরিণের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
সুন্দরবনের রেঞ্জগুলোর কাছে এসব শিকারির একটি দীর্ঘ তালিকাও আছে। তবে তালিকার বাইরেও অনেক মানুষ শিকারের সঙ্গে যুক্ত। এখন তালিকার ভেতর–বাইরের শিকারিসহ গোটা সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে সুন্দরবনে বন্য প্রাণী শিকার কখনোই বন্ধ হবে না। যথাযথ পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। এখানে বন বিভাগের কোনো অসাধু কর্মকর্তা–কর্মচারী বা বনরক্ষী থাকলে তাঁকেও ছাড় দেওয়া যাবে না।