শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিরসন জরুরি

সম্পাদকীয়

শিশুদের পাঠদানের জন্য শুরুতেই যে বিষয়টি অপরিহার্য, তা হলো শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। এখন স্কুলভবনই যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাতে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা কীভাবে সম্ভব। এ কারণে যেটি ঘটে—শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে ভয় পায় এবং নিরুৎসাহিত হয়। তেমনটিই ঘটছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বেশ কটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ঝুঁকিতে থাকেন বিদ্যালয়গুলোতে। এ জন্য বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও কমে গেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলার হাঁসখালী, গাইয়াখালী, নাটানা, পুইজালা, দিঘলারআইট, কমলাপুর, লক্ষ্মীখালী, পশ্চিম ফটিকখালী, বৈকরঝুটি ও খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। এসব বিদ্যালয়ে কবে নতুন ভবন হবে, তা বলতে পারেন না উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ফলে স্কুলভবনগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

কোনো কোনো বিদ্যালয়ের ভবন এক যুগ ধরে বেহাল। কোনো ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে গেছে, এমনকি ছাদের বড় বড় অংশ মাঝেমধে৵ খসে পড়ে। এতে আহত হয় শিক্ষার্থীরা। ছাদ ধসে পড়ায় এক শিক্ষক গুরুতর আহতও হন। বেশির ভাগ ভবনের দেয়াল ও পিলার ফাঁক হয়ে রড বের হয়ে গেছে। দরজা-জানালার অবস্থাও নাজুক। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে জানালাগুলো। বর্ষাকালে বা বৃষ্টির মৌসুমে এমন স্কুলভবনে পাঠদান কার্যক্রম কেমন চলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টিনের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী স্কুলঘর বানিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমন শ্রেণিকক্ষে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। একটি স্কুলে একসময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল, এখন তা কমে হয়েছে অর্ধশতাধিক। কয়েকটি স্কুলে শৌচাগারও ভেঙে পড়েছে। তাহলে কেন শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে?

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, ১০টি বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকটি বিদ্যালয়ে টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর ভবন জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করার জন্য জেলা অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ বরাদ্দ আসবে, তা বলতে পারবেন না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিশ্চয়ই জেলা অফিসকে বারবার তাগাদা দিয়ে যাবেন। এখন জেলা অফিসের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। আমরাও স্কুলগুলোর নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।