সাম্প্রতিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পুনর্বাসন ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে যখন এ–সংক্রান্ত ঘোষণা আসে, সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো
স্বস্তিবোধ করেছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের জাতীয় বীর ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে আন্দোলনে শরিক হননি। তাঁরা আন্দোলন করেছেন গণতন্ত্রের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের একটা বড় অংশ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেক পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটি নিহত কিংবা গুরুতর আহত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় সংঘাত–সংঘর্ষে ২১ হাজার ৮০০ জনের বেশি আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছিলেন বা অঙ্গহানি হয়েছে বা এর ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ৫২৫। তাঁদের কেউ কেউ চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে চলে গেলেও এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন শতাধিক।
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবার জন্য নিজেদের কোনো অর্থ দিতে হয়নি। সরকারি কোষাগার থেকে চিকিৎসা খরচ জোগানো হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয়ের পাশাপাশি স্বজনদের খরচ কিংবা বাড়ি যাওয়ার পর সংসার চালানো নিয়ে তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তা আছে।
সরকার জুলাই-আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পাঁচ লাখ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তা অপ্রতুল বলে মনে করি। বিশেষ করে যাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন, যাঁরা চোখ, পা, হাত হারিয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার জন্য এটা খুবই অপ্রতুল। অনেককে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে কিংবা হবে। সে ক্ষেত্রে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় জনপ্রতি এক লাখ টাকা দেওয়া প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
প্রথম আলোর খবর থেকে আরও জানা যায়, ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটে ভিড় করেছিলেন ১২ জন আহত ব্যক্তি, যাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের সুচিকিৎসার দাবি জানাতে এসেছিলেন। ২১ সেপ্টেম্বর ৫০–৬০ ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে ভিড় করেন এবং পাঁচজনের একটি দল তাঁর সঙ্গে দেখাও করেন। কেবল যাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যেতে পেরেছেন, তাঁদের তো বটেই; যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করবে আশা করা যায়।
আশার খবর হলো, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য রোববার ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল ঢাকায় এসেছে। দলটি পঙ্গু হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে রোগীদের অবস্থা পরীক্ষা করবে। পরবর্তী সময়ে চীন থেকে আরও বড় আকারের বিশেষজ্ঞ দল আসারও সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চোখে আঘাত পাওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ দল আনারও চেষ্টা চলছে।
সরকারের এসব উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সমস্যা হলো গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা আগেভাগে হওয়া প্রয়োজন। বিলম্বে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আহত প্রত্যেক রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকার নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। প্রয়োজন হলে কাউকে বিদেশে পাঠিয়েও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় কোনো রকম অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রতা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।