পলাতকদের কারাগারে ফেরাতে হবে

সম্পাদকীয়

জুলাই ও আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, বিদ্রোহ করেছিলেন বন্দীরা। বিভিন্ন কারাগারে বাইরে থেকে চালানো হয় হামলা-ভাঙচুর। সে সময় কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ আসামি পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো ৭০০ আসামি পলাতক। কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনকে উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদপত্র এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

পলাতক বন্দীদের মধ্যে ৭০ জন হলেন জঙ্গি ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বন্দীসহ বিচারাধীন মামলার আসামিরা ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তার দিক থেকে বিবেচনা করলে এই তথ্যগুলো বেশ আশঙ্কাজনক। তাঁদের দ্রুত আটক করে কারাগারে ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে; প্রয়োজন হলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে এখন পর্যন্ত আলোচিত ১৭৪ জন আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীও মুক্তি পেয়েছেন। বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করে থাকে। কিন্তু সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসেন। আবার বের হওয়ার পর তাঁদের ওপর কোনো নজরদারি নেই। এর ফলে তঁাদের নতুন করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই জামিনে মুক্ত হলে তাঁদের অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছেন কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজদারি করা প্রয়োজন।

জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ পুরোনো রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন, এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সখ্য হয়েছে। কেউ কেউ সেই সুযোগও কাজে লাগাতে চাইছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে না তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া। এ রকমটা হলে ছাত্র–জনতার নতুন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ হবে না।

আরেকটি আশঙ্কার কারণ হলো, কারাগার থেকে বন্দীদের পালানোর সময় অস্ত্র লুটের ঘটনাও ঘটেছিল। সেসব অস্ত্র এখনো পুরোপুরি উদ্ধার করা যায়নি। দ্রুত এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অস্ত্র উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে এসব অস্ত্র অপরাধী চক্রের সদস্যদের হাতে পড়তে পারে।

এ ছাড়া জুলাই–আগস্ট মাসে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ফলে কারাগারগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসস্থলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জরুরি ভিত্তিতে এসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামত করে কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ কারাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী রাখা হয়। এর ফলে কারাগারে নানা রকম সমস্যাও তৈরি হয়। এর মধ্যে কারাগারের নিরাপত্তা দুর্বলতার সমস্যার বিষয়টি এবার দৃশ্যমান হলো। এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারাগারকে একটি প্রকৃত সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।