দুর্গম এলাকায়, বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবার সুবিধার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। গত কয়েক বছরে নৌ অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিয়ে প্রথম আলোর অনেকগুলো প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়, সেগুলোর দশা করুণ।
প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম ছিল এমন: প্রধানমন্ত্রীর উপহার নৌ অ্যাম্বুলেন্স ডুবে আছে হাওরে, সেই নৌ অ্যাম্বুলেন্স এখন পরিত্যক্ত, নদীতীরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নৌ অ্যাম্বুলেন্স, বিনোদনের কাজে নৌ অ্যাম্বুলেন্স! এবং নৌ অ্যাম্বুলেন্স কাজে আসে না দাকোপের মানুষের।
হাতিয়াতেও একটা নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সাত মাস পার হলেও সেটি সচল করা যায়নি। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকতে থাকতে অকেজো হয়ে গেছে বলা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটির এমন দশা, বলতেই হয়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও এ জন্য জ্বালানি তেল বা জনবল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এরপরও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় তিন বছর চালু রাখা হয়েছিল।
পরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাতিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের একমাত্র নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ প্রায় সাত মাস ধরে নলচিরা ঘাটে পড়ে আছে। মেরামত না করায় সেটি আর সচল করা যায়নি।
ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জেলা সদরে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এক ঘূর্ণিঝড় গিয়ে এখন আরেক ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে অচল নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। এ নিয়ে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। রোগীদের জেলা সদরে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিতে গিয়ে স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমন পরিস্থিতিতে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বক্তব্য, মাসখানেকের মধ্যে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করা যাবে। এটি মেরামতের জন্য একটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আউটসোর্সিং খাত থেকে একজন চালককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া হলে প্রায় সাত মাস ধরে হাতিয়াবাসীকে গুরুতর রোগী নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। আমরা আশা করব, দ্রুত এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে এবং নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি আবার চালু হবে।