নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক

সম্পাদকীয়
কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। ফলে রোববার (২১ জুলাই ২০২৪) প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত এ সম্পাদকীয় এখন অনলাইনে প্রকাশ করা হলো।

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু থেকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও সেটি এখন সহিংস পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে ১৬ জুলাই রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদসহ নানা জায়গায় আরও প্রাণহানির পর এ আন্দোলন দেশের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ইতিমধ্যে গত তিন দিনে নিহতের সংখ্যা এক শ ছাড়িয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন সাংবাদিকও আছেন। আহত হয়েছেন আরও সাংবাদিক। আন্দোলনে সাংবাদিকসহ কোনো প্রাণহানিই কাম্য নয়।

নানা প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে কোনো আন্দোলন, বিক্ষোভ, মিছিল, সংঘর্ষ ও সহিংসতায় আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণহানিও হয়। গত কয়েক দিনের আন্দোলন–সংঘর্ষ–সহিংসতায় সেটি আবারও আমরা দেখলাম।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ছররা গুলিতে নিহত হন অনলাইন পোর্টাল ঢাকা টাইমস–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদি। একই দিন ভোরের আওয়াজ পত্রিকার গাজীপুরের প্রতিনিধি শাকিল হোসেন ঢাকায় এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন। শুক্রবার সিলেট নগরীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নয়া দিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি এ টি এম তুরাব সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। তাঁর গায়ে ছিল স্প্লিন্টারের একাধিক জখম।

শুক্রবার প্রথম আলোর দুই জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্র সাংবাদিক সাজিদ হোসেন, খালেদ সরকারসহ চারজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এর আগের দিন প্রথম আলোর আলোকচিত্র সাংবাদিক সুমন ইউসুফ ও মানবজমিন–এর আলোকচিত্র সাংবাদিক জীবন আহমদ সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন।

আমরা দেখতে পাচ্ছি মারধর বা আহতের শিকার হওয়া ছাড়াও হেনস্তার শিকারও হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ও সংবাদপত্র অফিসের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ঢাকাসহ সারা দেশে ১০০ জনের বেশি সাংবাদিক হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন। আর তিনজন সাংবাদিকের প্রাণহানির বিষয়টি তো শুরুতেই উল্লেখ করা হলো। সাংবাদিকেরা এভাবে আক্রান্ত হবেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই সংবাদকর্মীরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ জন্য তাঁরা বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। আশা করি, তাঁরা আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে, সাংবাদিকেরা যাতে লক্ষ্যবস্তু না হন। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।