একটি সত্যকে ঢাকতে গাজীপুরের বাসন থানা-পুলিশ একের পর এক অসত্যের আশ্রয় নিয়েছে। সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে থানা হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এই মামলায় বাদী করা হয়েছে রবিউলের ভাই মহিদুল ইসলামকে। অথচ তিনি জানিয়েছেন, মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত শনিবার অনলাইনে জুয়া খেলা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পেয়ারাবাগান এলাকার সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামসহ (৪৫) চারজনকে ধরে নিয়ে যায় বাসন থানার পুলিশ। টাকা দিয়ে অন্য তিনজন ছাড়া পান। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় রবিউলকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় বলে তার স্বজনদের অভিযোগ।
এর প্রতিবাদে বুধবার সকালে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। নির্যাতনে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় বাসন থানার দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
রবিউলের মৃত্যুর পর বাসন থানায় যে তিনটি মামলা করা হয়, তার দুটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার। এই মামলার বাদী পুলিশ নিজে। এই মামলা নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু যে মামলা সম্পর্কে বাদী নিজেই কিছু জানেন না, সেই মামলাকে তাঁরা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন? একজন শক্ত–সমর্থ মানুষকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেল এবং থানা থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেলেন, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
পুলিশ যদি তাঁকে ছেড়েই দেবে, তাহলে যখন পরিবারের সদস্যরা গেলেন, তখন দিল না কেন? সে ক্ষেত্রে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম পুলিশের নির্যাতনেই মারা গেছেন। নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুও একধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা। পুলিশ যদি মনে করে থাকে আসামিরা দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন, তাহলে তঁাদের আদালতে হাজির করল না কেন?
ব্যবসায়ী রবিউলের মৃত্যুর বিষয়ে বাসন থানা-পুলিশের দায় আছে বলেই দুই এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অতীতেও দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এলে তাঁকে ক্লোজড বা দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এটাকে শাস্তি না বলে অপরাধীকে রক্ষা করার কৌশল মাত্র। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেখানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন একটি থানার দুই এএসআইয়ের
বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করালে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে না। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একাধিক মানবাধিকার সংস্থাও অনুরূপ দাবি করেছে।
বাসন থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এর আগেও চাঁদাবাজি ও নিরীহ মানুষকে হয়রানির এন্তার অভিযোগ ছিল। কর্তৃপক্ষ সেসব অভিযোগ আমলে নেয়নি বলেই থানা-হাজতে আসামি মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মৃত্যু অনেক কমে এলেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। এটি মোটেই মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ নয়। পুলিশ হেফাজতে আর কত মৃত্যুর ঘটনা দেখতে হবে?